প্রতিশোধ যেন ‘সমানুপাতিক’ হয় : ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও আইআরজিসির কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যার কঠোর প্রতিশোধ নেয়া হবে এবং যেকোনো পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী থাকতে হবে বলে ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে চিঠি দিয়ে বলেছে, প্রতিশোধ যেন ‘সমানুপাতিক’ হয়।

১৯৭৯ সালে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসানের পর তেহরানে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস। সুইস দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠানোর এক চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের যতটুকু ক্ষতি করেছে, প্রতিশোধও যাতে সেই অনুপাতে হয়।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসির) ডেপুটি কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আলি ফাদাবি বিষয়টি জানান। এর আগে শুক্রবার সকালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোলেইমানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর ওই বছরের নভেম্বরে তেহরানের বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাস দখল করে ৫২ মার্কিনিকে অপহরণের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ১৯৮০ সাল থেকে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে তেহরানে অবস্থিত সুইস দূতাবাস।

আইআরজিসির) ডেপুটি কমান্ডার আলি ফাদাবি জানান, হামলার পরপরই কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘এমনকি তারা বলেছিল যে, ইরান যদি প্রতিশোধ নিতে চায় তবে আমরা যা করেছি তার অনুপাতে নে প্রতিশোধ নেয়।’

রিয়ার অ্যাডমিরাল আলি ফাদাভি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কঠোর প্রতিশোধের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই প্রতিশোধ শুধু ইরানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। গোটা অঞ্চলব্যাপী সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।’

সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ‘কঠিন প্রতিশোধের’ ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু হলে ইরানের ৫২টি গুরুত্বপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালানো হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগালেরও মধ্যেই রয়েছে।

আইআরজিসির মুখপাত্র সোলেইমানি হত্যার পর রক্তের বদলা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, আইআরজিসির কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ চালিয়ে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাভেদ জারিফ আরও বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সোলেইমানির উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কাজেই তার হত্যাকাণ্ডের এমন পরিণতি হতে পারে যা কারো পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়।

তবে যে পরিণতিই হোক তার পুরো দায়ভার ঘাতক যুক্তরাষ্ট্রকে বহন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন জারিফ। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের পর মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট নয়া উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব সব পক্ষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেন। তবে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাননি।

সোলেইমানি হত্যার পর প্রতিশোধের হুংকার ছেড়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বলেছেন, ‘বিশ্বের কুচক্রি ও শয়তান রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে অনেক বছর ধরে একনিষ্ঠ ও বীরোচিত জিহাদ চালিয়ে গেছেন সোলেইমানি। যে অপরাধীরা তাদের নোংরা হাত দিয়ে গতরাতে জেনারেল সোলেইমানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’

শুক্রবার ভোররাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিমান হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। ওই হামলায় ইরাকের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাশদ আশ-শাবি’র উপ প্রধান আবু মাহদি আল-মুহানদিস’সহ মোট ১০ জন নিহত হন।

জেনারেল সোলাইমানি ছিলেন খামেনির সবচেয়ে আস্থাভাজন জেনারেলদের একজন। ১৯৯৮ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার কৌশলে লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ বাহিনী এবং ইরাকের শিয়াপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোরদার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইরানের।

ইরাকের সশস্ত্র শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস (পিএমএফ) এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তাদের বাহিনীর উপপ্রধান আবু মাহদি আল মুহাদ্দিসও শহীদ হয়েছেন। মুহাদ্দিস ছিলেন জেনারেল সোলেইমানির বিশ্বস্ত এবং তার উপদেষ্টা। হামলার সময় দুজন একই গাড়িতে ছিলেন।