বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, বিজয় আর স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন, তার থেকেও বেশি কঠিন এই বিজয় এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আজ বাংলার আকাশে শকুনের আনাগোনা দেখা যায়। বাংলাদেশের বিজয়কে ছিনতাই করে, ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে গড়া এই মহান বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য আবার নতুন ষড়যন্ত্রের দানা বাধছে। প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের মদদে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করার জন্য চক্রান্ত চলছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল নগরীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মামুনুল হক বলেন, ভারতের সেবাদাসী শেখ হাসিনার বিভাজনের রাজনীতির ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলাদেশের আপামর রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতা অভূতপূর্ব যে ঐক্য গড়ে তুলেছিল সেটিই ছিল বাঙালি জনতার মূল হাতিয়ার। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
অপরাপর রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পারস্পরিক প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বিভেদে লিপ্ত হওয়ার সময় হয়নি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, এলডিপি, এনডিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ সকল রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে আমি আহ্বান জানাব, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে গড়ে ওঠা আমাদের ঐক্যকে প্রাচীরের মতো মজবুত রাখতে হবে। দেশপ্রেমিক জনতা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে বিদেশি কোনো প্রভুদের প্রশ্রয়ে সেই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আর নতুন করে ফিরে আসার সুযোগ পাবে না। কিন্তু আমরা যদি বিভক্ত হই, আমাদেরকে আবার কোনো ভিনদেশি শক্তির হাতে এ দেশের স্বাধীনতাকে ইজারা রাখতে হবে। কাজেই সেই দিন আমরা দেখতে চাই না।
মামুনুল হক বলেন বলেন, শেখ হাসিনা সেদিন চেষ্টা করেছিল আরও হত্যা করতে। সে আর্মি, বিজিবি, র্যাব-পুলিশকে অর্ডার দিয়েছিল, চালাও গুলি যত হত্যা করতে হয় হত্যা করো। রক্তের সাগর প্রবাহিত করেও ক্ষমতার মসনদে সে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ধন্যবাদ জানাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে, তারা পরিষ্কার করে দিয়েছিল আমরা এ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটি বুলেটও ছুড়তে পারব না। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের জনতার পাশে এসে দাঁড়ানোর কারণে শেখ হাসিনার স্বপ্নটা ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও ব্যবহারের সুযোগ পায়নি। আকাশপথে উড়াল দিয়ে যে তার প্রভুর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। প্রমাণ হয়েছে জনতার শক্তির সামনে স্বৈরাচারী শক্তি যত বড়ই হোক না কেন কোনোদিন চিরস্থায়ী না, শেখ হাসিনাও পারেনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে কিন্তু আগস্ট বিপ্লবের সম্মানার্থে বিগত ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তির সুবাদে এই সরকার এবং সহযোগীদেরকে এখনো পর্যন্ত বিনা শর্তে বাংলাদেশের মানুষ সহযোগিতা এবং সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন এই সমর্থন অনন্তকালের জন্য থাকবে তাহলে আপনারা ভুল করবেন। রাজনৈতিক সংলাপ ডাকুন। শুধু লোক দেখানোর জন্য আনুষ্ঠানিক সংলাপ নয়। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপনারা সমন্বয় মজবুত করুন, সকলের সঙ্গে ইন্টারনাল-এক্সটারনাল সব ধরনের যোগাযোগ বৃদ্ধি করে সকলের সহযোগিতা নিয়ে এই সরকারকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই সরকার ব্যর্থ হলে আগস্ট বিপ্লবের সুফল বাংলার মানুষ ঘরে তুলতে পারবে না। যেকোনো মূল্যে আগস্টের বিপ্লবকে সফল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বরিশাল জেলার আহ্বায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ জোবায়ের গালিবের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।