দেশের পুরাতন চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
কমিশনের প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং সরকারের কার্যপরিধি সুবিস্তৃত হওয়ার ফলে বর্তমান মধ্য প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার কাঠামো যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয় না। অপরদিকে, মেয়াদি এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে খুঁটিনাটি বহু কাজ সম্পাদন করা হয়। ক্ষমতার প্রত্যর্পণ (ডেলিগেশন) বিবেচনায় দেশে বিশাল জনসংখ্যার পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে দেশের পুরাতন চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এর ফলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের ওপর চাপ হ্রাস পাবে।
প্রতিবেদনে আরও যা আছে
রাজধানী ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় রেখে দিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট বা রাজধানী মেয়াদি মহানগর সরকার (Capital City Government) গঠনের সুপারিশ করা হলো। অন্যান্য প্রদেশের মতো এখানেও নির্বাচিত আইন সভা ও স্থানীয় সরকার থাকবে। ঢাকা মহানগরী, টঙ্গি, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্টের আয়তন নির্ধারণ করা যেতে পারে।
জেলা পরিষদ বাতিল
স্থানীয় সরকারের একটি ধাপ হিসেবে জেলা পরিষদ বহাল থাকবে কি না, সে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা রয়েছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কখনোই নাগরিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হননি। কিছু জেলা পরিষদ বাদে অধিকাংশেরই নিজস্ব রাজস্বের শক্তিশালী উৎস নেই। ফলে অধিকাংশ জেলা পরিষদ আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সেহেতু জেলা পরিষদ বাতিল করা যেতে পারে। জেলা পরিষদের সম্পদ প্রস্তাবিত সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকারকে হস্তান্তর করা যেতে পারে।
পৌরসভা শক্তিশালীকরণ
পৌরসভার গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানীয় সরকার হিসেবে একে অধিকতর শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ করা হলো। পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে। কারণ, চেয়ারম্যান একবার নির্বাচিত হলে মেম্বারদের আর গুরুত্ব দেয় না।
উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা
স্থানীয় সরকার হিসেবে উপজেলা পরিষদকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ করা হলো। তবে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বাতিল করা যেতে পারে। উপজেলা পরিষদকে আরও জনপ্রতিনিধিত্বশীল করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশকে আবর্তন পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্য হওয়ার বিধান করা যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত না রেখে তাকে শুধু স্বল্পমেয়াদি সংরক্ষিত বিষয় ও বিধিবদ্ধ বিষয়াদি যেমন- আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি দেখাশোনার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। এর উদ্দেশ্য তাকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা। একজন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার অফিসারকে উপজেলা পরিষদের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ভূমি মধ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কর্মরত মেয়াদি কানুনগোদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অধীনে তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন করা যেতে পারে। এ রূপ পদোন্নতির পরীক্ষা পিএসসির মাধ্যমে হতে হবে। পরবর্তী সময়ে তারা পদোন্নতি পেয়ে ২৫ শতাংশের মতো সহকারী কমিশনার (ভূমি) হতে পারবে।
ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার
ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা জনসংখ্যার অনুপাতে ৯ থেকে ১১ করা যেতে পারে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুইজন সদস্য নির্বাচিত হবেন, যাদের মধ্যে মেয়াদি একজন অবশ্যই নারী হতে হবে বলে বিধান করার সুপারিশ করা হলো। এর ফলে একদিকে মহিলাদের ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব এবং তাদের কর্ম এলাকা সুনিশ্চিত হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন মেম্বারদের ভোটে। কারণ চেয়ারম্যান একবার নির্বাচিত হলে মেম্বারদের আর গুরুত্ব দেয় না।
এর আগে বুধবার দুপুর ১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনগুলো হস্তান্তর করেন।