পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেকার বিরোধ অনেক দিনের। আর এটা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে। সেটিরই প্রকাশ আবারও দেখা গেল। কারণ দেশটির অন্যতম বৃহৎ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক জিও টিভির সম্প্রচার প্রায় বন্ধ রয়েছে। পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ এলাকায় চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ। তবে ইঙ্গিত মিলছে, এর পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে।
নানা সময়ে আলোচনায় থাকা শক্তিশালী সেনাবাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কর্মসূচি প্রচারের ফলে ওই টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটতে পারে বলে পাকিস্তানে আলোচনা আছে। অনেকেই জোর গলায় বলছেন, জিও টিভির সম্প্রচার বন্ধের ক্ষেত্রে হাত রয়েছে সেনাবাহিনীর। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। তবে জিও টিভির সম্প্রচার বন্ধের (৮০ শতাংশ এলাকায় সম্প্রচার বন্ধ) নেপথ্যে আসলে কে রয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথোরিটি (পারমা) এবং তথ্য মন্ত্রণালয় কেউই ওই টিভির সম্প্রচার বন্ধে কোনো আদেশ দেয়নি।
তবে জিও টিভি নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী মীর ইব্রাহিম রহমান বলেছেন, ‘আমাদের টিভির সম্প্রচার দেশের ৮০ শতাংশ এলাকায় বন্ধ রয়েছে।’ তবে এ জন্য কে বা কারা দায়ী তা নিয়ে তিনি কথা বলেননি।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে জিও টিভির সম্প্রচার হঠাৎ করেই বন্ধ হওয়া শুরু হয়। ওই সময় দেশজুড়ে সেনাবাহিনী ও এর সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয় টেলিভিশনের সম্প্রচার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলের শুরুতে জিও নেটওয়ার্কের নিউজ, বিনোদন ও খেলাধুলাসংক্রান্ত চ্যানেলসহ সব চ্যানেলের সম্প্রচার সারা দেশে বন্ধ করে দেয় ক্যাবল অপারেটররা। পারমার তথ্য অনুসারে, জিও’র সম্প্রচারে বিঘ্ন না ঘটাতে ক্যাবল অপারেটরদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
জং গ্রুপের দ্য নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিশ্লেষক ফাসিহুর রেহমান খান টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘পারমা নোটিশ ইস্যু করেছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে শুনানি হয়েছে। কিন্তু কেউ জানেন না কীভাবে বা আইনগতভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে। দেশের এক অদৃশ্য হাতের বিপরীতে গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ যাদের কাছে তাদের দৃশ্যত অসহায় ও ক্ষমতাহীন দেখা যাচ্ছে। ওই অদৃশ্য হাত হলো আরেক ধরনের শক্তিশালী মানুষ।’
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অর্থায়ন ও পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে সমালোচনামূলক নানা প্রতিবেদন প্রচার করে জিও নেটওয়ার্ক। এতে দেশটির সেনাবাহিনী নাখোশ হয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া, তার অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে নানা সমালোচনা করা হয়েছে। এতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা নাখোশ হয়েছেন।
পাকিস্তানে জিও টিভির সম্প্রচার বন্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিটির এশিয়া বিষয়ক কর্মসূচির সমন্বয়ক স্টিভেন বাটলার এক বিবৃতি বলেছেন, জিও টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে রাখা পাকিস্তানের সংবিধানে তথ্য পাওয়ার যে অধিকারের কথা বলা আছে তার প্রতি সরাসরি হুমকি। এর নেপথ্যে কারা আছেন তাদের নাম খুঁজে পাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। অথবা তাদের নাম বলতে ভয় পাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।