সিলেটের বড়ইকান্দি এলাকার বাসিন্দা রুয়েব আলম। টেলিভিশনে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে দেখেছেন অনেকবার। তখন থেকে ইচ্ছা ছিল কাছ থেকে একবার দেখবেন। সিলেটে তার বাড়ি থেকে পদ্মা সেতুর দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। তাই বলে কি আর বসে থাকা যায়, তাইতো ইচ্ছা পূরণে দূরত্ব কোনো বাধা হয়নি। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পদ্মা পাড়ে ছুটে এসেছেন এই ব্যক্তি।
শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেলে পদ্মা পাড়ে দেখা হয় রুয়েব আলমের সঙ্গে। কাছ থেকে পদ্মা সেতু দেখে মুগ্ধতার কথা জানান তিনি। অনেকটাই আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্ত্রী, বাচ্চা, বড় ভাই-বোনদের নিয়ে আসছি সিলেট থেকে। পদ্মা সেতু দেখবো ইলিশ খাবো। সেতু খুব সুন্দর। এখানে একটা পার্ক করে দিলে ভালো হয়। অনেক সুন্দর এই সেতু।’
শুক্রবার বিকেলে রুয়েব আলমের মতো দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের মিলনমেলার চিত্র দেখা যায় মুন্সিগঞ্জের লৌহজং পদ্মাপাড়ে। শিমুলিয়াঘাট ও মাওয়া মৎস্য আড়ৎ সংলগ্ন পাড়ে দেখা যায় নানা বয়সী শ্রেণিপেশার শত শত মানুষের উপস্থিতি। সেতুর সঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ ছিল রাতে বেলার আলোকিত সেতু।
ঢাকা থেকে মাকে সঙ্গে নিয়ে আসা আরেক যুবক বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কথা অনেক শুনেছি। তাই মাকে নিয়ে দেখতে এসেছি।’
দর্শনার্থী মনিরুল ইসলামের বাড়ি বরিশালে। চাকরির সুবাদে থাকেন নারায়ণগঞ্জ। তিনি বলেন, ‘এই সেতু আমাদের গর্ব। আজ ছুটের দিন ছিল তাই ঘুরতে এলাম। স্পিডবোট নিয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলাম তবে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। ২৬ তারিখ চালু হলে রাতে সেতুতে উঠবো।’
পদ্মা সেতু দেখতে আসা ফয়জুল করিম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সেতুতে সড়কবাতি জ্বলছে। দিনের বেলা দেখিছি, রাতের বেলা দেখা হয়নি। আজ ছুটি তাই দেখতে এলাম। রাত পর্যন্ত থেকে অপরূপ দৃশ্য দেখবো।’
শুধু নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে নয়; ট্রলার, স্পিডবোটে চড়ে নদীতেও ভ্রমণ করতে দেখা যায় অনেককে। যদিও সেতুর নিরাপত্তা বিবেচনায় নির্ধারিত দূরন্ত বজায় রাখতে হয় সবাইকে।
সব বাধা, প্রতিকূলতা আর চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এখন উদ্ধোধনের অপেক্ষায় কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। অপেক্ষার প্রহর আর মাত্র সাতদিনের।
প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, সেতুর সড়কপথ একেবারেই প্রস্তুত। উদ্ধোধনকে ঘিরে বাকি থাকা ছোটখাটো কাজগুলোর দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। কাজ শেষে আগামী ২২ জুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেতু কর্তৃপক্ষকে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দেবে।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।