পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে নির্মিত পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী ২১ মার্চ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে চলছে সার্বিক প্রস্তুতি।
এদিকে, ওইদিন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন বলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. নসরুল হামিদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানিয়েছেন।
পটুয়াখালীর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা জাগো নিউজকে বলেন, ২০২০ সালের ১৫ মে থেকে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে দুটি ইউনিটে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা লাভ করে। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় এখন একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াটের পুরোটাই সরবরাহ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২১ মার্চ এই প্রকল্প উদ্বোধনের সম্মতি দিয়েছেন।
এদিকে, বুধবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায়, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. নসরুল হামিদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশ কয়েকটি ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আমরা এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা আসছে ২১ মার্চ। সেই সঙ্গে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে কার্যক্রম শুরু করা সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্প পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের।
এই কেন্দ্রটি ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। বর্তমান দুনিয়ার সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অত্যাধুনিক ঢাকনাযুক্ত কোলডোম ব্যবহার করেছে যার কারণে পরিবেশের ওপর কোনো প্রকার বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী পাবে সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। প্রধানমন্ত্রীর এই চিন্তা থেকেই বাস্তবে রূপ নেয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা দিনরাত বদলে দিয়েছে পায়রার মানুষের জীবনবোধ, জীবনমান।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) মালিকানায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ‘পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নামে তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম অংশে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট মিলিয়ে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
পাশাপাশি প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এতে করে জাতীয় গ্রিডে পায়রা থেকে মোট ২৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।
এর আগে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০ পরিবারের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ উদ্বোধন করেছিলেন। সেসময় প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন।
তারও আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।