 
                                            
                                                                                            
                                        
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তবে, নির্বাচনের আগে অনেক চক্রান্ত ছিল, ষড়যন্ত্র ছিল।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। কাজেই আমার একটাই দায়িত্ব—এই দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।
নিজ নির্বাচনি এলাকার মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো করতে পারছি কেবল আপনাদের জন্য। কারণ, আপনারা আমাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছেন। আমার সব দায়িত্ব তো আপনারাই নিয়েছেন। আমার কোনো কষ্ট নেই। আমার মনে হয়, এই দায়িত্বটা যদি আপনারা না নিতেন; বাবা-মা-ভাই হারিয়েছি, আমার জন্য আমার হয়ে বলার কে আছে? কিন্তু আজকে আপনারা আমাকে সেই সাহস দিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন। এজন্য আমি নিশ্চিন্ত মনে দেশের কাজ করতে পারছি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিটি করা থেকে শুরু করে যেভাবে আপনারা কাজ করেছেন, এটা সারা বাংলাদেশের সমস্ত প্রার্থীর জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে এবং আমাদের অনেক প্রার্থীও তা অনুসরণ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা বাস্তব যে, এই ১৫ বছরে বাংলাদেশকে আমরা বদলে দিতে পেরেছি। সবথেকে বড় কথা আজকে পদ্মা সেতু হয়ে গিয়েছে বলেই সকলে খুব সহজেই আপনারা (গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে) চলে আসতে পারছেন।
জাতির পিতার কন্যা বলেন, বিশ্বব্যাংক ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিল। সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রমাণ করেছি যে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে বিশ্বকে দেখিয়েছি যে, আমরাও পারি।
তিনি বলেন, সামনে আমাদের যাত্রাপথ এত সহজ নয়। আমাদেরকে অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। অনেক চক্রান্তই বাংলাদেশটাকে ঘিরে আছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার তৈরি করায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। উদ্যোক্তা তৈরীতে সরকারের পদক্ষেপ ও বিনা জামানতে ঋণসুবিধা প্রদানসহ সরকারের প্রদেয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করেন।
কোনোরকম পরীক্ষায় একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে নিজের বস নিজে হওয়ার মাধ্যমে আরো ১০ জনের কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী যুদ্ধাবস্থার জন্য দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির কারণে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষদের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে সারা দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার জনগণও পিছিয়ে থাকবে না বলে আশা ব্যক্ত করেন ওই আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতার আশ্বাসের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেলের ফিসপ্লেট খুলে রেলের বগি ফেলে দেওয়া, রেলে আগুন দেওয়াসহ নানা অপকর্ম করে নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় কথা হলো জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে এবং ভোট দিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার যে ফিরে পেয়েছে, সেটা এবার তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি জানি, ১৯৭৫ এর পর এই সমস্ত অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করেছেন। যাহোক, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করেছি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি।
ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়াসহ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে নিজেদের এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন থাকলে খুঁজে বের করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও আর ঠিকানাবিহীন থাকবে না।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বার আছেন, তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আমরা অনেক প্রকল্প নিই এবং কাজ করি, সেই কাজগুলো যেন যথাযথভাবে হয়। মানুষ যেন এই কাজের সুফল পেতে পারে এবং এর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই স্থানীয় সরকারের কাজগুলো আপনারা করবেন। কাজের মানটা যেন ঠিক থাকে এবং কাজগুলো যেন যথাযথভাবে হয়। যেভাবে কাজ করলে পরে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে।
শেখ হাসিনা জানান, তার একটাই আকাঙ্ক্ষা—শেষজীবনে তিনি টুঙ্গীপাড়ায় থাকবেন, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘুমিয়ে আছেন।