ওমর ফারুক মিঠুর বাবা বাবুল মিয়া সবজি বিক্রি করে সংসার চালান, জগেন লাকড়ার বাবা বিশ্বনাথ লাকড়া চাষ করেন অন্যের জমি। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর বাবুল আর রাজশাহীর গোদগাড়ীর বিশ্বনাথের ছেলেরা এখন দিন গুনছে ব্রাজিল যাওয়ার।
যারা ফুটবল খেলেন, দেখেন ও ভালোবাসেন তাদের কাছে স্বপ্নের এক দেশের নাম ব্রাজিল। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে ল্যাটিন আমেরিকার এ দেশটিতে যাওয়ার সৌভাগ্য কয়জনের হয়? আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যে চার কিশোর ফুটবলার এক বছরের জন্য ট্রেনিংয়ে যাচ্ছেন ব্রাজিলে তাদের দুই জন এই মিঠু ও জগেন। অন্য দুই জন রংপুরের লতিফুর রহমান নাহিদ ও নাজমুল আকন্দ।
ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। পেলে, গারিঞ্চা, রোনালদো আর নেইমারদের দেশ ব্রাজিল। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এ দেশটির ফুটবলের ভক্ত। ভক্ত নেইমারদের। বাংলাদেশের এই দুই তরুণ ফুটবলার মিঠু ও জগেনেরও স্বপ্নের ফুটবলার নেইমার। পড়ার কক্ষে নেইমারের নানা ধরণের ছবি সাঁটিয়ে রেখেছেন তারা। চার কিশোরের দলের সঙ্গে এই দুইজনও যাচ্ছেন নেইমারদের দেশে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্রাজিল সরকার এ চার ফুটবলারকে নিচ্ছে তাদের দেশে। সঙ্গে কোচ হিসেবে যাচ্ছেন আবদুর রাজ্জাক। সব কিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তারা উড়াল দেবেন ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে। ব্রাজিলে পাঠানোর জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ট্রায়ালের মাধ্যমে নির্বাচন করেছেন এ চার কিশোর ফুটবলারকে। চূড়ান্ত ট্রায়ালের পর তারা ঘরে ফিরে গিয়েছেন। ঢাকা থেকে চারজনকে সুখবর পাঠিয়েছেন তাদের কোচ।
খবর জানার পর কেমন লাগছিল মিঠুদের? চারজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। লতিফুর রহমান নাহিদ ও নাজমুল আকন্দের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তাদের দুইজনের কেউই ফোন ধরেননি। পাওয়া গেছে ওমর ফারুক মিঠু আর জগেন লাকড়াকে।
‘কয়েকদিন আগে কোচ স্যার (আবদুর রাজ্জাক) ফোন করে জানিয়েছেন আমি চান্স পেয়েছি। পাসপোর্ট করার জন্য আমার জন্ম নিবন্ধন কার্ড পাঠাতে বলেছেন। খবর শোনার পর আমি কী খুশি হয়েছি তা বোঝাতে পারবো না। আমাদের দেশের কয়জন ফুটবলার ব্রাজিল যেতে পারেন? আমি সুযোগ পেয়েছি। গ্রামের মানুষ এসে আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন। সবাই বলছেন ওখানে গিয়ে ভালো করে অনুশীলন করবা’-রাজশাহী থেকে বলছিলেন জগেন।
স্ট্রাইকার পজিশনে খেলেন জগেন। নেইমার ছাড়াও ব্রাজিলের তার প্রিয় খেলোয়াড় মার্সেলো। ব্রাজিল যাওয়ার স্বপ্ন কখনো ছিল না। এ সুযোগ তার কাছে অবিশ্বাস্য। এখন তার নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। তা হলে নেইমারকে দেখা। ‘ব্রাজিলে অনেক দিন থাকবো। নেইমার নিশ্চয় মাঝে মাঝে দেশে যাবেন। আমি চেষ্টা করবো নেইমারের সঙ্গে দেখা করার। সেখানে ভালো অনুশীলনের পাশাপাশি নেইমারকে দেখাই আমার স্বপ্ন’-বলছিলেন জগেন লাকড়া।
জগেনের মতো মিঠুর কাছেও স্বপ্নের দেশ ব্রাজিল। পেলে, নেইমারদের দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনিও রোমাঞ্চিত। খবর শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না মিঠু। কুড়ি গ্রাম থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মিঠু যেন কথাই বলতে পারছিলেন না। ‘এটা আমার জন্য বিশাল সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। নেইমারদের দেশে গিয়ে ফুটবল শিখবো, এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে! আমি ওখানে গিয়ে নেইমারের সঙ্গে দেখা করতে চাই’-বলছিলেন মিঠু।