পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মৎস্যবন্দর আলীপুর এবং মহিপুরের শিববাড়িয়া নদীতে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে হাজারো মাছ ধরা ট্রলার। সেসব ট্রলারে ধরা পড়েছে প্রচুর ইলিশ।
এদিকে, সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকায় দমকাসহ ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। প্রচুর ইলিশ শিকার করে সমুদ্র থেকে সব ট্রলার তীরে ফিরে এসেছে।
বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বরফ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্র থেকে সারি সারি ট্রলার মহিপুরের শিববাড়িয়া নদীতে প্রবেশ করে ঘাটে এসে নোঙর করছে। আলীপুর এবং মহিপুর দুই তীরে হাজারো ট্রলার অবস্থান করছে। সব ট্রলারে রয়েছে ইলিশ।
এফবি কালাম ট্রলারের মাঝি আব্বাস বলেন, হঠাৎ সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। জীবন ও সম্পদ রক্ষার তাগিদে ট্রলার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে আলীপুর-মহিপুর মৎস্যবন্দরে নোঙর করেছি। রাতে সমুদ্র আরও উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সমুদ্র থেকে সব ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আলীপুর-মহিপুরসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। সমুদ্র থেকে আসা ট্রলারগুলোতে প্রচুর ইলিশ রয়েছে। তবে এসব ইলিশ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাতে গিয়ে বরফ সঙ্কটে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আলীপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী আ. জলিল বলেন, বুধবার গভীর রাত থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় আলীপুর-মহিপুরের প্রায় অর্ধশত বরফ কলে বরফ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বরফ সঙ্কট হওয়ায় মাছ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আলীপুরের বরফ কল মালিক আনোয়ারা খান বলেন, বুধবার গভীর রাত থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বরফ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অথচ সাগর থেকে শত শত ট্রলার মাছ নিয়ে বন্দরে এসেছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বরফ দিয়ে মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন মোকামে পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ সংরক্ষিত বরফ দিয়ে মাছ বিভিন্ন মোকামে পাঠাচ্ছেন।
কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, সাগর উত্তাল হওয়ায় সব মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তীরে ফিরেছে। ফিরে আসা ট্রলারগুলো প্রচুর মাছ রয়েছে। গতরাতে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। মাছের আমদানি ভালো। তবে বিদ্যুতের অভাবে বরফ কল বরফ উৎপাদন করতে পারছে না। বরফের অভাবে মাছ বিভিন্ন মোকামে পাঠানো যাচ্ছে না। কোটি কোটি টাকার মাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ সব বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে।