নারী হয়েও পুরুষের বেশে ৩৬ বছর পার!

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

পুরুষের লালসা থেকে বাঁচতে নারী হয়েও ৩৬ বছর পুরুষের বেশেই কাটিয়েছেন তিনি। বাধ্য হয়েই এমন জীবন বেছে নিতে হয়েছে তাকে। এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে।

পেতচিয়াম্মা নামের ওই নারী যে গ্রামে থাকেন সেখানে পুরুষদের আধিপত্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাওয়ায় তার ওপর সবার কুনজর পড়তে শুরু করেছিল। গ্রামের মানুষের কটাক্ষ, পুরুষদের লালসার চোখ যেন তাকে আরও বেশি আতঙ্কিত করে তুলেছিল।

পুরুষদের কুনজর থেকে বাঁচতেই পুরোপুরি নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন তিনি। ৩৬ বছর ধরে গ্রামে পুরুষ পরিচয়ে বাস করছিলেন। তার জীবন সংগ্রামের কাহিনি ভারতীয় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তামিলনাড়ুর কাটুনায়াকানপট্টির বাসিন্দা পেতচিয়াম্মার। বিয়ের অল্প দিনের মাথায় স্বামীকে হারান তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। এরপরেই সংগ্রাম শুরু তার।

তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ঘিরে ধরেছিল সন্তান জন্ম দেওয়ার পর। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একা একজন নারী কীভাবে সন্তানকে লালন-পালন করবেন তা ভাবিয়ে তুলেছিল তাকে। এর মধ্যে সংসার টানতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছিল। কেউ তাকে কাজ দিতে চাইছিল না। বরং তার দিকে মানুষের খারাপ দৃষ্টি পড়তে শুরু করে। সমাজে প্রতিনিয়ত হোঁচট খেতে খেতে শেষমেশ নিজেকেই বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

গ্রাম ছেড়ে তিরুচেন্দুর মুরুগান মন্দিরে চলে যান পেতচিয়াম্মা। সেখানে গিয়ে নিজেকে পাল্টে ফেলেন। চুল ছোট করে, পোশাক বদলে পেতচিয়াম্মা থেকে মুথু হিসেবে নিজের নতুন পরিচয় তৈরি করেন। তার রূপ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, মুথুই আসলে পেতচিয়াম্মা।

লুঙ্গি আর শার্ট পরে মুথু পরিচয়ে গ্রামে ফেরেন পেতচিয়াম্মা। মেয়েকে বড় করতে পুরুষ হিসেবে সমাজে বাঁচার লড়াই শুরু সেই থেকে। কখনও চায়ের দোকানে, মাঠে, কখনও আবার হোটেলে কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি মেয়েকেও বড় করে তুলেছেন। পেতচিয়াম্মা বলেন, ২০ বছর ধরে গ্রামে আছি। কাকপক্ষীও টের পায়নি যে আমি সেই পেতচিয়াম্মা। একমাত্র আমার মেয়েই জানত এই গোপন কথা।

এখন ৫৭ বছর বয়স পেতচিয়ম্মার। তার মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। এই বয়সে এসেও নিজের পুরনো পরিচয়ে ফিরে যেতে চান না পেতচিয়াম্মা। মুথু পরিচয়েই তিনি বেশি খুশি। আমৃত্যু মুথু নামেই থাকতে চান এই ছদ্মবেশী নারী।

সূত্র: আনন্দবাজার