দেয়াল নির্মাণে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের ঘোষণা ট্রাম্পের

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষায় এই ‘দেয়ালে কাজ হবে’। তবে ট্রাম্পের জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করা যে তত সহজ হবে না, বিভিন্ন পক্ষ থেকে সেই আভাস আসা শুরু করেছে।

আইনি বাধার মুখে পড়তে যাওয়ার কথা জানেন বলেই ট্রাম্প বলেছেন, ‘আদেশে স্বাক্ষর করে দিয়েছি, এখন আইনি লড়াই হবে।’
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা ঐকমত্যে পৌঁছানোয় দেয়াল নির্মাণ ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকারের অচলাবস্থা ঠেকানো গেছে। তবে দেয়াল ইস্যুতে সামনে রাজনৈতিক জল যে আরও ঘোলা হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা ঘোষণার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। এটাকে প্রেসিডেন্টের ‘ক্ষমতার বড় ধরনের অপপ্রয়োগ’ বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশে গতকাল বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে ডেমোক্র্যাটদের উচিত একে আইনিভাবে চ্যালেঞ্জ করা।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার পক্ষে সাফাই গেয়ে গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ট্রাম্প বলেন, জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি দেয়াল নির্মাণে ৮০০ কোটি ডলার পাবেন। ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। মাদক, চোরাচালান চক্র, অবৈধ লোকজনের প্রবেশ ঘটছে। এটা অগ্রহণযোগ্য। প্রত্যেকেই জানে, দেয়াল নির্মাণ হলে এতে কাজ হবে।

দেয়াল নির্মাণের জন্য ৮০০ কোটি ডলার সামরিক নির্মাণ খাতের প্রকল্প থেকে নেওয়া হতে পারে। তবে ট্রাম্প যে পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা বলছেন, তা দেয়াল নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় থেকে অনেক কম। সীমান্তে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার দেয়াল নির্মাণে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

ট্রাম্প বলেন, তাঁর এই পদক্ষেপ মামলার মুখে পড়তে পারে এবং সে ক্ষেত্রে আইনি চ্যালেঞ্জ সুপ্রিম কোর্ট অবধি যাবে বলে তাঁর ধারণা।
ট্রাম্পের এ বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রথম আইনি চ্যালেঞ্জ করা হয়। একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ, বেসামরিক নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের তিনজন জমির মালিক ও প্রকৃতি সংরক্ষণের পক্ষে আদালতে অভিযোগ করেছে।

বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প বিপজ্জনক নজির স্থাপন করতে যাচ্ছেন। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে অনেক রিপাবলিকান রয়েছেন, তাঁরা ট্রাম্পের এই কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না। কারণ সাংবিধানিক ব্যবস্থাপনায় প্রেসিডেন্ট নয়, কংগ্রেস এ ধরনের তহবিল বণ্টন করে থাকে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বিপুলসংখ্যক ভূমি অধিগ্রহণ করবেন। এটা কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের অবস্থানকে খাটো করবে এবং বিপজ্জনক এক নজির স্থাপন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় সংকটের সময় প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভাষায় যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হওয়া অভিবাসীদের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ ক্ষমতাবলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা রয়েছে প্রেসিডেন্টের। জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে দেয়াল নির্মাণে সামরিক বা দুর্যোগ তহবিলের জন্য বরাদ্দ করা বাজেট থেকে অর্থ নিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বাজেট ইস্যুতে বিতর্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক ৩৫ দিন বন্ধ ছিল ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম (শাটডাউন)। অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে ফেডারেল সরকারের আট লাখ কর্মী বিনা বেতনে দিনযাপন করেছেন। এ নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন ফেডারেল কর্মীরা। পরে রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ২৫ জানুয়ারি ফেডারেল সরকারের চাকা আবার সচল করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে ফেডারেল সরকারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ দেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি অনুসারে কংগ্রেস অর্থ বরাদ্দ না পেলে ফের শাটডাউনের হুমকি দেন তিনি।

রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট দেয়াল নির্মাণে ৫৭০ কোটি ডলার না পেলে কোনো ধরনের বাজেট নথিতে সই করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বিষয়টি তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। তবে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানান।