নাসুম আহমেদ বলেছিলেন ‘আমাদের দিয়ে হচ্ছে না।’ কতটা অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করলে এমন কথা মুখ ফুটে বের হয় তা বোঝা গিয়েছিল নাসুমের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে। সেদিন অনেক সমালোচনাও হয়েছিল এই তরুণকে এমন বড় মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে পাঠানো নিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে করুণ পরিণতির পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিজে। তার কণ্ঠেও যেন নাসুমের সেই সুর, ‘পারিনি কেন, হয়নি কেন….অনেক উত্তর আমার জানা নেই।’ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রার চিত্র ফুটে উঠে মাহমুদউল্লাহর এমন আত্মসমর্পণে।
ব্যাটিং করতে নেমে সেই আগের ম্যাচগুলোর পুনরাবৃত্তি। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে লিটন দাস-মুশফিকুর রহিমরা যেন নেমেছিলেন; আরও কতটা খারাপ করা যায় সেই প্রতিযোগিতায়! পাওয়ার প্লেতে নেই চার উইকেট, ১০ ওভার না যেতেই ৫ উকেট আর ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৫ ওভারে মাত্র ৭৩ রানে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান ৭০। যেন অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া। এর আগের ম্যাচেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছিল ৮৪ রানে।
বিশ্বকাপের মঞ্চে কেন বাংলাদেশের এমন অবস্থা? অনেক প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া মাহমুদউল্লাহর মতে, শ্রীলঙ্কার কাছে সুপার টুয়েলভে প্রথম ম্যাচ হারের সেই ধাক্কাতেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ এফিটাফ লেখা হয়ে যায়।
মাহমুদউল্লাহর ভাষ্য,‘বিগত সিরিজগুলো দেখেন, প্রথম ম্যাচ জিতেছি ভালো ধারাবাহিকতা পেয়েছি। পরেরটা জিতেছি আবার ধারাবাহিকতা পেয়েছি। আমাদের দলের আমি মনে করি ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বকাপের মতো কোন টুর্নামেন্ট শুরু করি বা কোন সিরিজ, আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য ধারাবাহিকতা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। শুরুতেই এটা ব্যঘাত হয়েছে। তারপর আমরা সংগ্রাম করেছি। যদি শ্রীলঙ্কার সাথে প্রথম ম্যাচটা আমরা জিততে পারতাম তখন হয়বো আমাদের সেই ধারাবাহিকতা আসতো এবং সবার আত্মবিশ্বাস আরো উজ্জীবিত হতো।’
মোহাম্মদ নাঈম ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে এদিন ব্যাট হাতে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুঁড়ে দিয়েছিল। বোলিং করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয়েছিল, আবার শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ালে সাকিব আল হাসান ব্রেক থ্রু এনে দেন। এরপর এক লিটন দাসের দুই ক্যাচ মিসে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যায় ৫ উইকেটে। এরপর বাংলাদেশ শিবিরকে ঘিরে ধরে হতাশা। পুরো টিম হয়ে যায় বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। যে যার মতো আছেন, থাকছেন। ঠিক মতো অনুশীলনও করেনি পুরো দল। পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটের অসহায় আত্মসমর্পণ। তৃতীয় ম্যাচে আবার শারজাহতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সহজ ম্যাচে ৩ রানে হার। আর শেষ দুই ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করে ১০০ রানও করতে পারেনি। হারতে হয়েছে ৬ ও ৮ উইকেটে।
মাহমুদউল্লাহ এখন আর পেছনে তাকাতে চান না। বিশ্বকাপের পরই পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সেখানে কীভাবে উন্নতি করা যায় বাংলাদেশ অধিনায়ক এখন সেটিই ভাবছেন।
‘এখন এ কথাগুলো তো বলেও লাভ নাই, আমরা বাজে পারফরম্যান্স করেছি, আমি খুব হতাশ। আমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছি এটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। সামনে পাকিস্তান সিরিজ আছে, আমাদের অনেক কিছু উন্নতি প্রয়োজন, কীভাবে আমরা কোন কোন জায়গায় উন্নতি করবো। উন্নতির অবশ্যই জায়গা আছে, মানে আমি আগেই বললাম অনেক কিছুর উত্তর আমার কাছে জটিল লাগছে, আমি এটা বাদ দিতে চাই।‘
এমন বিষাদ মাখা বিশ্বকাপ শুধু মাহমুদউল্লাহ নয়, ভুলে যেতে চাইবেন যে কেউই। তাই তিনি বারবার বলছেন ‘উত্তর জানা নেই, এগুলা বাদ দেন।’ বিশ্বকাপের এসব বেদনাবিধুর স্মৃতি ভুলে মাহমুদউল্লাহদের এবার নামতে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন মিশনে।