তিন ম্যাচ খেলার পরেও জয়ের দেখা পেল না বেক্সিমকো ঢাকা। পরপর দুই পরাজয়ের পর ফের জয়ের মুখ দেখল জেমকন খুলনা। ভালো বোলিং করলেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি ঢাকা। খুলনা ম্যাচ জিতে নিয়েছে ৩৭ রানের ব্যবধানে। যা টুর্নামেন্টে তাদের দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে টানা তিন ম্যাচ হারল মুশফিকুর রহীমের ঢাকা।
১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম তিন ওভারেই ৩ উইকেট হারায় ঢাকা। দলীয় সংগ্রহ ১৫ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরে যান তানজিদ হাসান তামিম (৩ বলে ৪), মোহাম্মদ নাইম শেখ (৩ বলে ১) ও রবিউল ইসলাম রবি (৯ বলে ৪)। দুর্দান্ত বোলিং করেন সাকিব আল হাসান। নিজের প্রথম দুই ওভারে কোনও রানই খরচ করেননি তিনি, আউট করেন নাইম শেখকে।
চতুর্থ উইকেটে বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেন ইয়াসির আলি রাব্বি ও মুশফিকুর রহীম। দুজন মিলে ৫৩ বলে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচের পাল্লা ঝুঁকতে পারে ঢাকার দিকে, তখন দলীয় ৭১ রানের মাথায় হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ইয়াসির। আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ২ চারের মারে ২১ রান করে এ ডানহাতি মিডল অর্ডার।
ইয়াসির ফিরে যাওয়ার পর মুশফিকও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। ইনিংসের ১৪তম ওভারে দলীয় ৭৮ রানের মাথায় স্লগ সুইপ করে ডিপ মিড উইকেটে শামীম হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ চারের মারে ৩৫ বলে ৩৭ রান। মুশফিকের মূল্যবান উইকেটটি নেন ব্যাট হাতে ৫ বলে ১৫ রান করা শুভাগত হোম।
এরপর শুধু বাকি ছিল খুলনার জয়ের আনুষ্ঠানিকতা। যা সহজেই সারেন শহীদুল ইসলাম, হাসান মাহমুদরা। মুশফিক ও ইয়াসির ব্যতীত ঢাকার পক্ষে আর কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৫ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। শেষপর্যন্ত ১০৯ রানে অলআউট হয় ঢাকা, খুলনা পায় ৩৭ রানের সহজ জয়।
খুলনার পক্ষে বল হাতে ৩টি করে উইকেট নেন শহীদুল ইসলাম ও শুভাগত হোম। এছাড়া হাসান মাহমুদ নিজের ঝুলিতে পুরেন ২টি উইকেট। বাঁহাতি স্পিনে ৪ ওভারে দুই মেইডেনসহ মাত্র ৮ রান খরচায় ১ উইকেট নেন সাকিব।
এর আগে ঢাকার পক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ, অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলামরা। তবে ফিল্ডারদের কাছ থেকে তেমন সমর্থন পাননি তারা, একের পর এক ছুটেছে ক্যাচ। সবমিলিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানে থামে খুলনার ইনিংস। যেখানে অতিরিক্ত খাত থেকেই আসে ১৬ রান।
বেক্সিমকো ঢাকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের আমন্ত্রণে টস হেরে ব্যাট করতে নামে খুলনা। টানা চতুর্থ ম্যাচে দলকে হতাশ করেন খুলনার দুই তারকা ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয় ও সাকিব আল হাসান। পরপর দুই ম্যাচে ইনিংস সূচনা করতে নেমে সাকিব আউট হয়েছেন ৯ বলে ১১ রান করে, বিজয়ের ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ৫ রান। তিন নম্বরে নেমে জহুরুল করেন ৯ বলে ৫ রান।
মাত্র ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চাপটা সামাল দেন ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহ। দুজন মিলে গড়েন ৫১ রানের জুটি, তবে খরচ করে ফেলেন ৫৬টি বল। নাইম হাসানের বলে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়েন ইমরুল। আউট হওয়ার আগে ৪ চারের মারে করেন ২৭ বলে ২৯ রান। তবে তার চেয়েও ধীর ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে উইকেটে এসে মুখোমুখি ২৯টি বলে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, ৩০তম বলে গিয়ে পান প্রথম চারের দেখা। শেষদিকে গিয়ে হাত খুলে খেলতে চেষ্টা করলেও সফল হননি। ইনিংসের শেষ ওভারে রুবেলের স্লোয়ারে বোল্ড হওয়ার আগে ৪৭ বলে করেছেন ৪৫ রান। যেখানে ছিল মাত্র ৩টি চারের মার।
মাহমুদউল্লাহ-ইমরুল চালিয়ে খেলতে ব্যর্থ হলেও দলের চাহিদা মেটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আরিফুল হক ও শুভাগত হোম চৌধুরী। মাহমুদউল্লাহকে খানিক চাপমুক্ত করে ৩ চারের মারে ১১ বলে ১৯ রান করেন আরিফুল। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকা শুভাগত ১ চার ও ১ ছয়ের মারে মাত্র ৫ বলে করেন ১৫ রান। মূলত এ দুজনের কারণে দেড়শ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ পেয়েছে খুলনা।
ঢাকার পক্ষে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন রুবেল, অভিষিক্ত শফিকুলের শিকার ২ উইকেট। মাত্র ১টি উইকেট পেলেও চার ওভারের স্পেলে ১০ রানের বেশি খরচ করেননি নাসুম। এছাড়া ৩ ওভারে ১৬ রানের বিনিময়ে ১ উইকেট নিয়েছেন নাইম হাসান।