ঢাকা ও চট্টগ্রামের শহরের বাইরে দেশের পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে তাদের জন্য কর্পোরেট করে বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। সংগঠনটির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে বাজেট আলোচনায় বিসিআইয়ের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনটির উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ। এ সময় বিসিআই সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, এনবিআরের শুল্কনীতির সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, ভ্যাটনীতির সদস্য রেজাউল হাসান ও করনীতির সদস্য কানন কুমার রায়সহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিসিআইয়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক প্রদানের সুবিধা সব শিল্পের জন্য সমানভাবে প্রদান, কর্পোরেট করহার কমানো ও করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোসহ আগামী বাজেটের জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে সংগঠনটি।
মঞ্জুর আহমেদ বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো সমস্যার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে শিল্প স্থাপন করলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে দেশের বড় একটা অংশে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। দেশ এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে পড়ছে এসব অঞ্চল। বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে ওইসব এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য কর্পোরেট করে বিশেষ সুবিধা দিলে উদ্যোক্তারা উৎসাহী হবেন। গ্রামেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
কাঁচামাল আমদানিতে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়ার দাবি করে তিনি বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত থাকা বা না থাকা সব শিল্পখাতে আবশ্যক সব মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। বর্তমানে শর্ত সাপেক্ষে কতিপয় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ওই রেয়াতি সুবিধা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বার্ষিক টার্নওভার করের ঊর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ টাকা দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্য সংযোজন করের (মূসক) নতুন আইন অনুযায়ী শিল্প ও সেবাখাতের জন্য বার্ষিক টার্নওভার করের ঊর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকায় উন্নীত করার অনুরোধ করছি। যেসব পণ্য ও সেবাখাতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান এবং ট্রেড লাইসেন্সধারী প্রতিটি খুচরা ব্যবসায়ীর বার্ষিক টার্নওভার ৩০ লাখ টাকার ওপরে অনূর্ধ্ব ৫ কোটি টাকা তারা মূসক আইনে নিবন্ধন গ্রহণ করবে। স্থানীয় মূসক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় বিষয়টি ১০০ ভাগ নিশ্চিত করবে। ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে টার্নওভার সম্পন্ন পণ্য খাতের যেসব প্রতিষ্ঠান উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করবে তাদের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য হবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে জন্য ব্যক্তি শ্রেণির আয়করমুক্ত সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করে মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত সীমা সাড়ে তিন লাখ করা দরকার। একই সঙ্গে নারী করদাতা ও ৬৫ বছরের ওপরের করদাতাদের জন্য আয়করমুক্ত সীমা তিন লাখ ৭৫ হাজার রাখার প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা চার লাখ ২৫ হাজার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা চার লাখ ৫০ হাজার রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
এ সময় কর্পোরেট কর হার কমানোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাবলিক লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে ১৮ এবং অনুন্নত এলাকায় ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখেন। অন্যদিকে ২০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় করহার ২৭ শতাংশ, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে ২৫ এবং অনুন্নত এলাকায় ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখছি।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশারারফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করছে। আমাদের এখন স্বনির্ভর হতে হবে। আমদানি-রফতানিসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা কমবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে কর আহরণ বাড়াতে হবে। ভ্যাটদাতার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করত হবে এমনটা চিন্তা না করে সবার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বাজেটে ভ্যাট ফাঁকিবাজদের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা থাকবে।
বিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবের জবাবে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো ঠিক হবে না। মানুষকে কর দেয়ায় অভ্যস্ত করতে হবে। কর্পোরেট কমানোর বিষয়ে সরকারও ইতিবাচক রয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছি। মূলধনী ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বৈষম্য দূর করার প্রস্তাবটি এনবিআর ভেবে দেখবে। ঢাকার বাইেের শিল্প স্থাপন করলে কর্পোরেট করে বিশেষ ছাড় দেয়ার বিষয়টিও এনবিআর ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।