দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৫৭টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে। রোববার (৯ জুলাই) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেওয়া তথ্যমতে, সারাদেশে ডেঙ্গুতে ইতিমধ্যে ১২ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬৭ জন।
ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কারণে হয়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কামড়ালে এই জ্বরের কবলে পড়তে হয়। এই মশা সাধারণত সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্তের আধাঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এবং মানুষকে কামড়িয়ে থাকে। যদিও এখন দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই মশা কামড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে আপনার ঘরে এবং আশেপাশে যে কোন জায়গায়, ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যাক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা/নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি শেল ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে নিশ্চিত হোন। কোথাও কোনো পানি জমতে দেওয়া যাবেনা। বাইরে বেরোলে ফুল হাতা জামা পড়ুন, মস্কুইটোরেলিপেন্ট লাগিয়ে নিন। বাড়িতে বিকেলের পরেই জানলা বন্ধ করে দিন। দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।
তারপরেও যদি কোনোভাবে ডেঙ্গু দ্বারা আপনি সংক্রমিত হন সেক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকে বেশ যত্ন করতে হবে। প্রথমত, বিশ্রাম নেওয়া খুব দরকার। যত ঘুমাবেন ততই ভালো। দ্বিতীয়ত, প্রচুর তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করুন একটু পরপর। সব নেশা থেকে দূরে থাকুন, একদম বন্ধ রাখুন।
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি–সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে শরীর ব্যাথার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন—নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে—‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট।
‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।
‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ—জ্বর। ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমিভাব, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কি না তা জানতে, এনএস ওয়ান টেস্ট করাতে হবে। চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু প্রথমবার হলে মৃত্যু হার কম কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার হলে মৃত্যুহার বেশি। যারা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছেন তাদেরকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।