ডলার সংকট: বাংলাদেশে তেল না পাঠানোর হুমকি

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা জ্বালানির মূল্য পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে দেশটির জ্বালানির মজুতও ‘বিপজ্জনকভাবে কমে’ আসছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পাঠানো দুটি চিঠির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।

চিঠির একটির সূত্র জানিয়েছে, ছয়টি আন্তর্জাতিক কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে জ্বালানি তেল বাবদ ৩০ কোটি ডলার পাবে। অর্থ না পাওয়ায় এদের কেউ কেউ বাংলাদেশে তেল পাঠানো কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি তারা তেলবাহী কার্গো না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে।

জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে জ্বালানি মূল্য পরিশোধ বিলম্বিত হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভারতের পাওনা রুপিতে পরিশোধধের অনুমতি দিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বিপিসি।

চিঠির বিষয়ে বিপিসির কাছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে যৌক্তিকভাবে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পদ্ধতিতে তারা কাজ করছে।

৯ মে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বিপিসি বলেছে, ‘দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সময়মতো আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে পারছে না।’

এর আগে গত এপ্রিল মাসে পাঠানো আরেক চিঠিতে বিপিসি বলেছে, ‘মে মাসের তফসিল অনুযায়ী জ্বালানি আমদানি করা না গেলে দেশব্যাপী সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, একইসঙ্গে জ্বালানির মজুতও বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।’

এ ব্যাপারে বিপিসি ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রয়টার্স কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা কেউ জবাব দেয়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এক তৃতীয়াংশের বেশি কমে যায়। সাত বছরের মধ্যে রিজার্ভ সবচেয়ে কমে ৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সংকট মোকাবিলায় গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণের আবেদন করে বাংলাদেশ। আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে এবং এই ঋণের প্রথম কিস্তি বাংলাদেশ ইতিমধ্যে পেয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ব্যয় মেটাতে চলতি অর্থবছরে বিপিসিকে ৫০০ কোটি ডলার এবং এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলাকে ২০০ কোটি ডলার দিয়েছে। এ ছাড়া এলসি খুলতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩০০ কোটি ডলার দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু যৌক্তিকভাবে ব্যবস্থাপনা করছি। বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও আমাদের ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ রয়েছে।’

বিপিসি প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টন পরিশোধিত তেল ও এক লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে।

বিপিসির এপ্রিলের চিঠি অনুযায়ী, বাংলাদেশের কাছ থেকে যে ছয়টি কোম্পানি বকেয়া অর্থ পাবে সেগুলো হলো চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি সিনোপেকের বাণিজ্যিক অংশীদার ইউনিপেক, ভাইটল, ইনক, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি), পেট্রোচায়না এবং ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি।

বিপিসির ৯ মের চিঠি অনুযায়ী, চলতি বছর ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারিকে ৪ কোটি ১১ লাখ ডলার, আইওসিকে ডিজেল ও জেট ফুয়েল বাবদ ১৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার দিতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে রুপিতে দেনা পরিশোধ করতে পারে, তার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বিপিসি।