ঝালকাঠিতে বিষখালী নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এরই মধ্যে কেন্দ্রটির ভবন-ভিতের নিচের মাটি সরে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে দেবে সেটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় পাঠ গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে এখানে অধ্যয়নরত দেড় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এলেও থাকছেন আতঙ্কের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- ইমারজেন্সি সাইক্লোন রিকভারি অ্যান্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এজন্য প্রথমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। তবে নির্মাণ শেষ করতে ব্যয় হয় ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথম থেকেই তারা ভাঙনপ্রবণ বিষখালী নদীর খুব কাছে (মাত্র ১০০ গজের মধ্যে) এ ভবন নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। তখন বলা হয়েছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদী শাসনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় শেষ পর্যন্ত তাদের আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে আশ্রয়কেন্দ্র ও বিদ্যালয়টির টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
তারা আরও জানান, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ফণির সময় স্থানীয়রা এখানে আশ্রয় নিতে আসেন। কিন্তু ভাঙনের মুখে থাকায় ভয়ে তারা আর আশ্রয় নেননি। তাদের দাবি, নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতার কারণেই সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকা বিফলে যাওয়ার পথে। খোদ আশ্রয়কেন্দ্রটি ঝুঁকিতে থাকায় এখানে আর কেউ আশ্রয়ের জন্য আসবেন বলে মনে হয় না। পাশাপাশি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে এখানে অধ্যয়নরত শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
সরেজমিন দেখা গেছে, এরই মধ্যে ভাঙনে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার সড়কটি বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে স্থানীয় বাজার। ভবনটি এখন শুধু পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয়রা ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারটি রক্ষার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এখন এটি নদীগর্ভে বিলীন হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও চরম ভোগান্তিতে পড়বে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় নিতে গিয়ে তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হবে।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমীন বলেন, ভবনটি নির্মাণের সময় পাউবো নদী শাসনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করছিল। কিন্তু সেটি শেষ না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আতাউর রহমান বলেন, শুধু এ আশ্রয়কেন্দ্র ও বিদ্যালয়ই নয়, নদীতীরের স্থানীয় অনেক সরকারি স্থাপনাই ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা এসব স্থাপনার তালিকা তৈরি করছি। কোনো স্থাপনার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন হলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।
এরই মধ্যে ঝুঁকিতে থাকা দেউরী সাইক্লোন শেল্টারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রটি রক্ষায় শিগগিরই এখানে সিসি ব্লক ফেলাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’