ঝালকাঠিসহ প্রত্যন্ত গ্রামবাংলার হাট-বাজারে আয়োডিনহীন লবন বিক্রির উৎসব চলছে। আয়োডিন ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও প্রচেষ্টা চালানোর পরেও শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে শিল্প লবন বেশী বিক্রি হয়।
আয়োডিনযুক্ত লবনের মূল্য সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার মিল মালিকদের ভর্তুকি মূল্যে আমদানিকৃত আয়োডিন সরবরাহ করলেও সাধারণ মানুষের আয়োডিনের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছেনা। যে কারণে ঝালকাঠিসহ সারাদেশে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগের ঝুঁকি ও রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছে।
এছাড়া জনসাধারণকে আয়োডিনযুক্ত লবন ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে ও সচেতনা বৃদ্ধিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিক ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগ চোখ-কান বন্ধ রাখছে। তাই সরকারের ভর্তুকি মূল্যে বরাদ্দকৃত আয়োডিন নিয়ে লবন মিল মালিকরা অবৈধ মুনাফা লুটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, একদিকে নিরক্ষরতা অন্যদিকে অসচেতনতার কারণে আয়োডিনযুক্ত লবনের বদলে উৎপাদিত শিল্প লবন রান্নার কাজে ব্যবহার করছে সাধারণ মানুষ। এ লবন গরুর খাদ্যসহ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণে ব্যবহার করা হলেও গৃহকর্তারা বাজার থেকে এ লবন কিনে বাসাবাড়িতে ও হোটেল-রোস্তারায় ব্যবহার করছে।
ঝালকাঠি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরীব অসহায় ও বেশির ভাগ সাধারণ মানুষই শিল্প লবন রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। তারা এই লবনে আয়োডিন নেই জেনেও নির্বিঘ্নে রান্নার কাজে শিল্প লবন ব্যবহার করায় আয়োডিনেরঅভাব জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার ফলে গ্রাম গঞ্জের সাধারণ-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে শহর-গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে আয়োডিনের চরম ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বলে বিসিক সূত্রে জানা যায়।
সম্প্রতি ঝালকাঠি জেলার ৪ উপজেলা ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন জনবহুল হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রকাশ্যেই বাজারে আয়োডিনবিহীন শিল্প লবন বা খোলা লবন বিক্রি হচ্ছে। সাদা বস্তা ভর্তি শিল্প লবন মিল থেকে নিয়ে ব্যবসায়ীরা ১ কেজি, আধা কেজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাপে ছোট-বড় পলিথিনের প্যাকে বানিয়ে দোকানে রেখেই বিক্রি করছে। আর সাধারণ ক্রেতারা সামান্য কমমূল্যে পেয়ে আয়োডিনবিহীন এ লবনের প্যাকেট দেদারছে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের অনুপোযুগী এ লবন ক্রয়ের বিষয়ে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা ও ক্রেতা জানায়, প্রথমত গরুর খাবারের জন্য আর দ্বিতীয়ত তরকারি রান্নার জন্য প্রচুর পরিমানে শিল্প লবন ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।
বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা জানান, খোলা বা শিল্প লবনের ক্ষমতা (দগ) বেশী, দাম কম আর এতে কোন কেমিক্যাল মিশানো হয়না বলে এই লবন মাছ-মাংস ও তরকারী রান্নায় বেশী ব্যবহার হয়ে আসছে। এ ছাড়াও গৃহপালিত গরুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করায় গ্রামাঞ্চলে এই লবন বেশি কেনাবেচা হয়। প্রতি হাটে-বাজারেই আয়োডিন যুক্ত প্যাকেট লবনের চেয়ে এই খোলা বা শিল্প লবন বেশী বেচাকেনা হয় বলে তারা জানান।
সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে শিল্প লবন ‘খাবারে ব্যবহারের জন্য নয়’ বা ‘ জনস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই আয়োডিন যুক্ত লবন খান’ বা যেকোন সতর্কীকরণ শীরোনাম বস্তার গায়ে লেখা হয়না কেন এ প্রশ্নের জবাবে ঝালকাঠির একাধিক লবন মিল মালিক জানান, ইতিপূর্বে ইউনিসেফ, বিসিক বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা ছিলোনা, এখন বর্তমান জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাই আমরা শিঘ্রই এটা বাস্তবায়ন করবো।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি বিসিক উপ-ব্যস্থাপক জালিস মাহমুদ বলেন, আসলে শিল্প লবন মানুষের খাবার কাজে ব্যবহারের জন্য বিক্রি প্রতিরোধে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারলেই মানুষের খাদ্যে এর ব্যবহার কমে আসবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে আয়োডিন শরীরের জন্য কতটা উপকারি ও প্রয়োজন বা এর অভাবে কি কি ক্ষতি হয়।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এর সহকারি পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বলেন, আমি এ বিষয়ে খাবার হোটেল মালিকদের সবসময় সতর্ক করে থাকি। তবে গ্রাম পর্যায়ে এ নিয়ে আরো প্রচার প্রচারণা বাড়ানো হলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।