জিয়া পরিবারের পাচার করা অর্থের তথ্য সংসদে

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের পাচারকৃত অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা এখনো তদন্তাধীন।

দেশের জনগণের সম্পদ আর লুটপাট, পাচার করতে দেয়া হবে না। এ ধরনের অপকর্ম তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন এবং জড়িতদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনগণের পয়সা জনগণকে ফেরত দেয়ার যেসব আইনী প্রক্রিয়া রয়েছে তার ব্যবস্থা করা হবে।

বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তথ্য তুলে ধরেন।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত রিপোর্ট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অপরাধ হতে অর্জিত অর্থ নিয়মবহির্ভূতভাবে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে ২০১২ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত ২০ লাখ ৪১ হাজার ডলার সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। বিএনপি নেত্রীর আরেক ছেলে তারেক রহমান দেশের বাইরে প্রচুর অর্থ পাচার করেছে। তারেক এবং তার ব্যবসায়ীক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন যৌথভাবে একটি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিনিময়ে প্রায় ২১ কোটি টাকার মতো সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে পাচার করেছে। এ ব্যাপারে শুধু বাংলাদেশ নয়, এফবিআইও তদন্ত করেছে। এর সূত্র ধরে এফবিআইয়ের ফিল্ড এজেন্ট ডেবরা ল্যাপরিভোট ২০১২ সালে ঢাকায় বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা দিয়েছে। একইভাবে লন্ডনের ব্যাংকেও প্রায় ছয় কোটি টাকা পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক দেশে খালেদা জিয়ার ছেলেদের টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে যা এখনো তদন্তাধীন। এরমধ্যে অন্যতম হলো- বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি, সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তি।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির রিপোর্ট তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকায় খালেদা জিয়া তিন নম্বর হিসেবে সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি বলেন, প্রকাশিত এসব সংবাদের কোনো প্রতিবাদ জানায়নি খালেদা জিয়া। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই জনগণের সম্পদ আর লুটপাট, পাচার করতে দেয়া হবে না। এ ধরনের অপকর্ম তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনগণের পয়সা জনগণকে ফেরত দেয়ার যেসব আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে তার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারাডাইস পেপারে নতুন করে প্রকাশিত নামের তালিকায় ওঠে এসেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নাম। প্রকাশিত এ নথিতে তালিকায় শীর্ষেই আছে তারা। এছাড়া নতুন প্রকাশিত ২৫ হাজার নথিতে বের হয়ে আসছে আরও রাঘব বোয়ালদের নাম ও তাদের অর্থ পাচারের নানান তথ্য।

সংসদে উত্থাপিত প্যারাডাইস পেপার্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া ২০০৪-০৫ সালে কেইম্যান আইসল্যান্ড এবং বারমুডায় দুই মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। এছাড়াও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ওয়ান গ্রুপের তিনটি কোম্পানি খোলা হয় ট্যাক্স হেভেনে। তারেক জিয়ার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো বারমুডার বিভিন্ন কোম্পানিতে ২০০৫ সালে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। কোকোর মৃত্যুর পর এ বিনিয়োগ তার স্ত্রী শর্মিলা রহমানের নামে স্থানান্তরিত হয়। অর্থাৎ অবৈধভাবে ট্যাক্স হেভেনে জিয়া পরিবারের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। প্যারাইডাইস পেপার্স বিশ্বের ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ভাণ্ডার। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক পৃথিবীর ১৮০টি দেশের ধনী, সুপরিচিত এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। বেশির ভাগ তথ্যই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের, যারা কর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।