জামিনে থাকা বিবাদীকে থানায় আটকে ঘুস আদায়!

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

কুমিল্লার মুরাদনগরে জহিরুল ইসলাম নামে জামিনে থাকা এক বিবাদীকে থানার হাজতে আটকে রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুরাদনগর থানার এসআই সমীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে দায়ী ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রোববার দুপুরে জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কামাল্লা গ্রামের আয়েশা আক্তার বাদী হয়ে তার স্বামী জহিরুল ইসলামসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিবাদীরা ৯ ফেব্রুয়ারি আদালত থেকে জামিনে এসে থানায় রি-কল জমা দেয়।

ওই দিন বিকালে মুরাদনগর থানার এসআই সমীর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একদল পুলিশ রি-কল থাকা সত্ত্বেও বিবাদী জহিরুল ইসলামকে ধরে এনে থানার হাজত কক্ষে আটকে রাখে।

রাতেই সালিশ মীমাংসায় নিষ্পত্তি করার শর্তে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এসআই সমীর ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এলাকার লোকজন জহিরুল ইসলামকে ছাড়িয়ে নেন।

পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জহিরুল ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসার জন্য এসআই সমীর ভট্টাচার্য থানার গোলঘরে অনুষ্ঠিত সালিশ বৈঠকে জামিনে থাকা বিবাদী জহিরুল ইসলামকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

৩ দিনের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ও ১৫ দিনের মধ্যে বাকি ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেন এসআই সমীর ভট্টাচার্য।

অন্যথায় এ টাকা সময়মতো পরিশোধ না করলে বিভিন্ন মামলা দিয়ে আজীবন জেলে পচে মরতে হবে বলে হুমকি দেয় জহিরুল ইসলামকে।

নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম ১৭ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি ৩ লাখ টাকা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৮ মার্চ এসআই সমীর ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেন।

সালিশ বৈঠকে কথা হয়- বাদী আয়েশা আক্তার মামলা তুলে নেওয়ার পর এসআই সমীর ভট্টাচার্যের কাছ থেকে টাকা বুঝে নেবে। কিন্তু গত ২৯ মার্চ বাদী আয়েশা আক্তার রহস্যজনক কারণে আদালতে হাজির হয়নি।

ফলে ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম বিষয়টি আদালতকে অবহিত করলে বিচারক ওই টাকা পরবর্তী তারিখে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

পরে ওইদিন জহিরুল ইসলাম এসআই সমীর ভট্টাচার্যের কাছে তার দেওয়া টাকা চাইলে, সমীর ভট্টাচার্য জানান তার কাছে কোনো টাকা নেই। সে এ বিষয়ে কোনোকিছুই জানে না।

বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম গত ৭ এপ্রিল এসআই সমীর ভট্টাচার্যের এমন কর্মকাণ্ডের হাত থেকে রেহাই পেতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন।

বিষয়টি দাউদকান্দি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের তদন্তাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে কামাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার খান বলেন, জরিমানার ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা সমীর ভট্টাচার্যের কাছে জমা রাখা হয়েছে।

মামলা তুলে এসে বাদী আয়েশা আক্তার এসআই সমীর ভট্টাচার্যের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা ছিল। জহিরুল ইসলামের কাছে শুনেছি এখনো আয়েশা আক্তার মামলা তুলে নেয় নাই। এসআই সমীর ভট্টাচার্য টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম বলেন, আদালত থেকে জামিনে আসার পর পুলিশ কর্তৃক হয়রানি ও জেলের ভয় দেখিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় মীমাংসা করার ঘটনাটি সঠিক।

অভিযুক্ত এসআই সমীর ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জহিরুল ইসলামকে জোরপূর্বক থানায় তুলে আনা হয়নি।

১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়। আর সালিশ বৈঠক করেছে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। আমি পাশে বসা ছিলাম মাত্র।

মুরাদনগর থানার ওসি আবুল হাশিম বলেন, এসআই সমীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) ফয়েজ ইকবাল বলেন, এসআই সমীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত চলছে, তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।