বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব চালুর পর জার্মানি কখনো বাদ পড়েনি। কথাটা এখন থেকে ভুল। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলের অবিশ্বাস্য হারে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ল গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা! এই বিশ্বকাপে এটাই সবচেয়ে বড় অঘটন। যোগ করা সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে মহামূল্যবান গোল দুটি করেন কিম ইয়ং-গাউন ও সন-হিউং-মিন।
‘এফ’ গ্রুপে ভীষণ জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়েছিল চার দল। শেষ ষোলোয় উঠতে কাজানে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে নিজেদের কাজটা সেরে রাখতে হতো জার্মানিকে। পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হতো মেক্সিকো-সুইডেন ম্যাচের ফলেও। ইয়েকাতেরিনবুর্গে সুইডেন ৩-০ ব্যবধানে মেক্সিকোকে হারানোয় জার্মানির জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কোরিয়ার বিপক্ষে জিততেই হতো জার্মানিকে। কিন্তু জোয়াকিম লোর শিষ্যরা এই কাজটাই করতে পারলেন না!
জার্মানির এই অবিশ্বাস্য বিদায়ে একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকল। ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে ইউরোপের দলগুলো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের টুর্নামেন্টেই বাদ পড়েছে প্রথম রাউন্ড থেকে। জার্মানি এবার সেই ধারাটাই বজায় রাখল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে জার্মানি কখনোই প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়েনি। ব্যতিক্রম শুধু ১৯৩৮ বিশ্বকাপ। সেবার টুর্নামেন্ট শুরুই হয়েছিল শেষ ষোলোর নকআউট পর্ব থেকে। সুইজারল্যান্ডের কাছে সেবার ‘রিপ্লে’ ম্যাচে ৪-২ গোলের হার বিদায় নিয়েছিল জার্মানি।
আর জার্মানি ৩ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপের চতুর্থ দল হয়ে বিদায় নিল বিশ্বকাপ থেকে। জার্মানদের সমান ৩ পয়েন্ট পেলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় তৃতীয় হওয়ার সান্ত্বনা পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফিরল দক্ষিণ কোরিয়া। তবে বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে এই জয়টা নিঃসন্দেহে তাদের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা।
জোয়াকিম লোর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলেছেন কোরিয়ানরা। প্রথমার্ধেই দু-তিনটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল দলটি। এই ম্যাচে যে কিছু একটা অঘটন ঘটতে যাচ্ছে, ১৯ মিনিটে তার একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার। ফ্রিকিক থেকে কোরিয়ার উ-ইয়ং-জাংয়ের শট গ্রিপ করতে পারেননি নয়্যার। তখন অল্পের জন্য গোল হজম থেকে বেঁচে যায় জার্মানি। ঠিক তার ৬ মিনিট পরই আরও একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেন সন-হিউং-মিং। মাত্র ১০ গজ দূর থেকে বল পোস্টের বাইরে মারেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানি প্রেসিং ফুটবল খেললেও সর্বনাশ যা হওয়ার হয়েছে যোগ করা সময়ে। ৯২ মিনিটে কর্নার থেকে জার্মানদের হৃদয় বিদীর্ণ করে গোল করেন কোরিয়ান সেন্টারব্যাক কিম ইয়ং-গাউন। মাঠের রেফারি প্রথম অফসাইডের অজুহাত তুললেও ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সহায়তায় ভুলটা শুধরে নেন।
৯ মিনিট যোগ করা সময় পাওয়ায় গোল শোধ করে জিততে মরিয়া হয়ে ওঠেন জার্মানরা। আর তাই গোলপোস্টে নিজের জায়গা ছেড়ে প্রতিপক্ষের অর্ধে চলে গিয়েছিলেন নয়্যার। সেই সুযোগে যোগ করা সময়ের ৬ মিনিটে কোরিয়ান মিডফিল্ডার জু সে-জং পাস বাড়ান স্ট্রাইকার সন-হিউং-মিনকে। গোলরক্ষকবিহীন গোলপোস্টে বল পাঠাতে তিনি কোনো ভুল করেননি। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনোই হাল না ছাড়া জার্মানরা এই গোলের পর হাল ছেড়ে দেন।
তবে জার্মানি যে গোলের সুযোগ পায়নি তা কিন্তু নয়। তিমো ভের্নার-মারিও গোমেজ-ওজিলরা দুই অর্ধেই বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন। ম্যাচ গোলশূন্য থাকা অবস্থায় লিও গোর্তেকা হেডে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। পারেননি। ভের্নারের ভলি দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন কোরিয়ান গোলরক্ষক চো হিউন-উ। জার্মান স্ট্রাইকারের জোরালো শট এক হাতে ‘সেভ’ করেন তিনি। তা ছাড়া ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে মাত্র ৬ গজ দূর থেকে হেডে গোল করতে ব্যর্থ হন ম্যাট হামেলস। সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে বল পাঠান তিনি।
গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে জার্মান একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন এনেছিলেন লো। কিন্তু আসল কাজটা, মানে গোলটাই করতে পারেননি তাঁর শিষ্যরা। অন্যদিকে বিশ্বকাপে প্রথম এশিয়ান দল হিসেবে জার্মানিকে হারানোর গৌরবতিলক এখন দক্ষিণ কোরিয়ার। বাজিকর প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টগেটের মতে, এই ম্যাচে ২০:১ অনুপাতে কোরিয়ার বিপক্ষে বাজি ধরেছিলেন সবাই। বাজির এই হিসাবে তো বটেই, এবং এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে যত ম্যাচ হয়েছে, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় অঘটন।