স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (২৫ মার্চ) ঢাকায় আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবগঠিত সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের এটিই প্রথম ঢাকা সফর।
সফরে ভুটানের রাজা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি তিনটি চুক্তি সই ও একটি চুক্তি নবায়নের কথা রয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরাজা ওয়াংচুককে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাগত জানানোর পর গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর রাজা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এ দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে এই ‘ভিভিআইপি’ সফরের পর্দা উন্মোচনের সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভুটান বাংলাদেশের প্রতিবেশী অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র। ২৫-২৮ মার্চ সফরে ভুটানের রাজা আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ভুটানের রানি, পরিবারের সদস্যরা, মন্ত্রীবর্গ ও পদস্থ কর্মকর্তারা রাজার সফরসঙ্গী হচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পর্যটন, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সমন্বয়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি, ভারতকে সঙ্গে নিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা, স্বল্পোন্নত ধেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে উদ্ভূত চ্যালঞ্জেসমূহ মোকাবিলায় সহযোগিতা আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলেও জানান ড. হাছান।
ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক সই ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি পুনঃনবায়নের সম্ভাবনা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ভুটানের রাজা ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। ওইদিন সকালে তিনি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউিট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল পরিদর্শন, বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
২৭ মার্চ পদ্মা সেতু এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন এবং ২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে বিকেলে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে রাজা বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাজাকে বিদায় জানাবেন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গার্ড অব অনার দেবে।
রাজা ওয়াংচুকের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে ভুটানের জন্য উপহার হিসেবে যা থাকবে সে বিষয়েও আলোকপাত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি জানান, আগামী বছর থেকে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থী কোটা ২২ থেকে ৩০ করা, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ভুটানের অফিসারদের জন্য দুটি আসন বরাদ্দ দেওয়া, ভুটানে ফরেন সার্ভিস একাডেমি স্থাপনে কারিগরি সহায়তা দেওয়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে ভুটানের কর্মকর্তাদের তিন বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং সে দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার দেবে বাংলাদেশ।