ঘরে ৭টি লাশ, পাশে শুয়ে বৃদ্ধ বাবা

লেখক:
প্রকাশ: ১ দিন আগে

ঘরের একপাশে বিছানায় নিঃশব্দে শুয়ে আছেন বৃদ্ধ আবদুর রহিম। কথা বলার শক্তি নেই, নিঃশ্বাস ভারী। তবে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। তার ঠিক পাশেই ঘরে সারি করে রাখা সাতটি লাশ।

 

তাদের কেউ তার স্ত্রী, কেউ পুত্রবধূ, কেউবা আদরের নাতনি। শোকের ভারে নুয়ে পড়া নির্বাক রহিম চোখের জলে জানান দিচ্ছে তার হৃদয়ের আর্তনাদ। আবার ঘরের বাইরে বসে আহাজারি করছেন ওমান প্রবাসী বাহারের শ্বশুর ইস্কান্দার মিয়া। তিনি এই ঘটনার জন্য দায়ী করছেন গাড়ি চালককে।

বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপালী কাসারী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক এ দৃশ্য।

 

 

আগের দিন মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওমানপ্রবাসী ছেলে আবদুল বাহারকে আনতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার স্ত্রী, শাশুড়ি, দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনি।

 

বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায় তাদের মাইক্রোবাস। প্রাণে বেঁচে যান বাহার উদ্দিন, তার শ্বশুর ইস্কান্দার মিয়াসহ আরো তিনজন।

 

নিহত ব্যক্তিরা হলেন— আবদুর রহিমের শাশুড়ি ফয়জুন নেসা (৮০), স্ত্রী খুরশিদা বেগম (৫৫), পুত্রবধূ কবিতা বেগম (৩০) ও লাবনী বেগম (৩০) এবং নাতনি রেশমি আক্তার (১০), মীম আক্তার (২) ও লামিয়া আক্তার (৯)।

ওমানপ্রবাসী বাহার উদ্দিন নিজের চোখের সামনে একে একে স্ত্রী, মেয়ে, মা ও স্বজনদের মৃত্যু দেখেছেন। ভয়াবহ সেই সড়ক দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “খালে পড়ে গাড়িটা নৌকার মতো ভাসতেছিল, ড্রাইভাররে বললাম দরজার লক খুলে দিতে। সে লক খুলে দিলে সবাই সাঁতার কেটে বের হতে পারতাম। কিন্তু ড্রাইভার লক না খুলে নিজে একটা জানালা দিয়া বের হইয়া গেছে। আমরা কয়েকজন পরে জানালা ভেঙে বের হইছি। আমার মা-মেয়েসহ বাকিরা গাড়িতেই শেষ।”

 

তিনি বলেন, “চালক ঠিকঠাকভাবে গাড়ি চালাতে পারছিল না। কুমিল্লায়ও একবার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তে গেছিল। তখন আমরা তাকে বললাম, প্রয়োজনে একটু ঘুমাইয়া নিতে। কিন্তু সে ঘুম নিয়েই গাড়ি চালাইছে। শেষ পর্যন্ত এই বিপর্যয় হইছে।”

একটি জীবনঘনিষ্ঠ মুহূর্ত যেন এক নিমিষেই মৃত্যুতে পরিণত হলো। বাড়ি ফেরা নয়, প্রিয়জনদের হারিয়ে একাকী ফিরে এলেন বাহার। তার কান্না আর আকুতিতে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ।

 

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, “হাইয়েস গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত গতি ও চালকের চোখে ঘুমের জন্য এ দুর্ঘটনা ঘটে। তদন্ত চলছে।”

এদিকে, এ দুর্ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকাহত গ্রামবাসী বলছেন, এমন মৃত্যু যেন আর কোনো পরিবারকে দেখতে না হয়।  শুধু একটি আনন্দমুখর ফিরে আসাকে ঘিরে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল এক পরিবার। এই ক্ষত কোনোদিনই নিরাময় হবে না।