গাইবান্ধায় সন্ধ্যায় শুরু হয় পিঠা বিক্রির ধুম

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

দেশের উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় শীতের আমেজ শুরু হতেই অলিগলি, পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ীরা। বাহারি সব পিঠাপুলি নজড় কাড়ছে পিঠাপ্রেমীদের। সন্ধ্যা হলেই পিঠাপুলির দোকানগুলোতে বেচা-বিক্রির ধুম পড়ে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর থেকেই জেলা শহরসহ সাত উপজেলার জনবহুল অলিগলি ও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে বা বসে লাইন দিয়ে পিঠা খেতে দেখা যায় অনেককেই।

শীত মৌসুমে প্রতিটি বাড়িতে পিঠাপুলি বানানোর অয়োজন গ্রাম বাংলার চিরচারিত রীতি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ঘরে ঘরে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ব্যস্ততা ও পারিপার্শ্বিক সমস্যায় নিজ হাতে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন কমে গেলেও পিঠাপ্রীতি ও ভোজন কিন্তু থেমে নেই। পিঠাপ্রেমীরা এখন দোকানের পিঠার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে অনেকেই দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে স্বাদ মেটাচ্ছেন। আর এ পিঠা বিক্রি করেই জীবিকা চালাচ্ছেন অনেকে।

 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চুলার অল্প আঁচে ধোঁয়া উঠছে। তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিতই, ভাপাসহ অন্যান্য পিঠা। আর চুলা থেকে নামানোর পর মুহূর্তেই তা চলে যাচ্ছে অপেক্ষমাণ ক্রেতার হাতে। দোকানে ভাপা, পাটিশাপটা, তেলের পিঠা ও চিতই পিঠা বিক্রি হলেও চিতই আর ভাপা পিঠার চাহিদাই বেশি। চিতই পিঠার সঙ্গে সরিষা ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, মরিচ ভর্তা ও ধনিয়াপাতা ভর্তা দেওয়া হয়।

ভাপা পিঠা ৫-১০ টাকা, চিতই পিঠা ১০টাকা, তেলের পিঠা ১০ টাকা, পাটিশাপটা ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। ক্রেতারা রাস্তার পাশে দোকানে বসে সেই পিঠা খাচ্ছেন। কেউবা নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের অন্যদের জন্য।

গাইবান্ধা শহরের ট্রাফিক মোড়ের পিঠা বিক্রেতা মো. ইমন মিয়া বলেন, ‘বছরের এই সময়টা শীতকালীন পিঠার বিক্রি বেশি হয়। বর্তমানে চিতই ও ভাপা পিঠা তৈরি করছি। আর চিতই ও ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য থাকছে নারকেল গুড়সহ বাহারি পদের ভর্তা আর এই ব্যবসায় লাভও ভালো পাওয়া যায়।’

 

চিতই পিঠা খেতে আসা মো. আজিজুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, ‘শীতে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার যে ছবি আমাদের চোখের ভেসে ওঠে, এখন তার দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি হওয়ার কারণে পিঠা খাওয়ার একটু সুযোগ পাওয়া যায়।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর বাজারের পিঠা বিক্রেতা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্যাডেল চালিত রিকশা চালাতাম। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখন রিকশা চালাতে পারি না। দুই বছর যাবত এখানে পিঠা বিক্রি করছি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ পিছ পিঠা বিক্রি হয়। সব খরচ বাদে প্রতিদিন গড়ে ৫’শ টাকা লাভ হয়। এতেই সংসার চলে।’

গাইবান্ধা শহরের পিঠা বিক্রেতা মো. আইনুল হক বলেন, ‘এবার শীত বেশি হওয়ায় প্রচুর পিঠা বিক্রি হচ্ছে। বিকাল পাঁচটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়। রাতে পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পিঠা তৈরির খরচ বেড়ে গেছে। তাই লাভ একটু কম হয়। তারপরও প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকে।’