 
                                            
                                                                                            
                                        
সাতটি শর্ত পূরণ হলে জেলা কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তর করবে সরকার। এমন নিয়ম রেখে ‘জেলা কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগার ঘোষণাকরণ বিধি, ২০২০’ এর খসড়া করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
এখন এটি চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিচ্ছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। গত ৫ আগস্ট খসড়াটি সকল বিভাগীয় কমিশনার, কারা মহাপরিদর্শক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কারা উপ-মহাপরিদর্শক, কেন্দ্রীয়/জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার/জেল সুপারের কাছে পাঠিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে মতামত পাঠাতে বলেছে।
খসড়া বিধিতে কেন্দ্রীয় কারাগারের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলা হয়- জমির পরিমাণ ৩০ একর হতে হবে, তবে জমি প্রাপ্তি সাপেক্ষে এর পরিমাণ কম-বেশি করা যাবে। বন্দী ধারণ ক্ষমতা কমপক্ষে ৭০০ জন হতে হবে ও উৎপাদন বিভাগের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কেন্দ্রীয় কারাগার হতে হলে দশ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের অন্তরীণ রাখার সুবিধা থাকতে হবে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের অন্তরীণ রাখার সেলসহ দণ্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য ফাঁসির মঞ্চ থাকতে হবে।
এছাড়া কমপক্ষে ৫০ বেডের কারা হাসপাতালের সু-ব্যবস্থা, কারা কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকলে জেলা কারাগার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা যাবে। সরকার প্রয়োজন মনে করলে নতুন বৈশিষ্ট্য আরোপ এবং উপরের শর্ত শিথিল করতে পারবে বলেও বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিধিতে কারাগারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- যে কোনো স্থাপনা, স্থান, ইমারত যা বন্দীদের আটক রাখা, চিকিৎসা, সংশোধন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহৃত হবে এবং বন্দীকে স্থানান্তরের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনকে কারাগার বুঝাবে।
কেন্দ্রীয় কারাগার ঘোষণার জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন- পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন ও নির্বাহী প্রকৌশলী (গণপূর্ত)। সংশ্লিষ্ট জেলা কারাগারের জেল সুপার কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কারাগার ঘোষণা সংক্রান্ত জেলা কমিটির প্রতিবেদন এবং কেন্দ্রীয় কারাগার ঘোষণার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে যাবতীয় কাগজপত্রসহ কারা মহাপরিদর্শক সরকার বরাবর প্রস্তাব পাঠাবে।
কেন্দ্রীয় কারাগার ঘোষণার লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে হবে বলে খসড়া বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব বা অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ)।
বাংলাদেশ কারা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৭৮৮ সালে তৎকালীন শাসকরা একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার তথা কারা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮১৮ সালে রাজবন্দিদের আটক রাখার জন্য বেঙ্গল বিধি জারি করা হয়। ১৮৩৬ সালে জেলা ও তৎকালীন মহকুমা সদর ঢাকা, রাজশাহী, যশোর ও কুমিল্লায় কারাগার নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯২৯ সালে ঢাকা ও রাজশাহী কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশ জেল-এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে।