কে পাবে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ?

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

যুক্তরাষ্ট্রে আজ মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার কোনো পালাবদল না হলেও আইনসভার দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসাব বদলে যেতে পারে। রিপাবলিকান দল নিয়ন্ত্রিত বর্তমান কংগ্রেসের দুই কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিরোধী ডেমোক্রেটিক দলের।

এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল না হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি মানুষের মনোভাব জানা যাবে। আর এই জনমতের ওপরই নির্ভর করছে বর্তমান প্রশাসনের গৃহীত বিভিন্ন আলোচিত-সমালোচিত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতার বিষয়টি। ৫ নভেম্বর ইন্ডিয়ানার ফোর্ট ওয়েনে দেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে এই অনিশ্চয়তার বিষয়টি স্পষ্ট হয় আরও ভালোভাবে। ওই বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এত দিনের সব অর্জন আজ ঝুঁকির মুখে রয়েছে।’

ট্রাম্প যাকে অর্জন বলছেন, তাকে তার বিরোধী পক্ষ অন্য কিছুও বলতে পারে। সে তর্কে না গিয়েও বলা যায়, নিশ্চিতভাবেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য, সীমান্ত নিরাপত্তা, অভিবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। দীর্ঘদিন পর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচার সভায় যথার্থই বলেছেন, ‘আমাদের দেশের চরিত্র কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ব্যালটের ওপর।’ এ ছাড়া এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে ‘জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ নির্বাচন হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি এক টুইটার পোস্টে।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সব কটিতে এবং সিনেটের ৩৫টি আসনে ভোট হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৬টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদসহ রাজ্য আইনসভারও নির্বাচন হচ্ছে, যা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইনসভার দুই কক্ষেই বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকান। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে ডেমোক্র্যাটদের বর্তমান আসনগুলোর পাশাপাশি আরও ২৩টি আসনে জিততে হবে। সিনেটের হিসাব আপাত অর্থে সহজ। সেখানে ডেমোক্র্যাটদের প্রয়োজন বাড়তি দুটি আসন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আজ প্রথম ভোট গ্রহণ শুরু হয় পূর্ব উপকূলের অঙ্গরাজ্য মেইন, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউজার্সি, নিউইয়র্ক ও ভার্জিনিয়ায়। অগ্রিম ভোটের হিসাবে এরই মধ্যে ২০১৪ সালকে ছাড়িয়ে গেছে। এবারের নির্বাচনে আগাম ভোট পড়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৫ লাখ।

নির্বাচনে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ দুটিতেই রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারলে তারা ট্রাম্প ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। কিন্তু যদি কোনো একটিতে বা দুটিতেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় তবে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের পরিকল্পনাগুলোকে ঠেকিয়ে দিতে, এমনকি উল্টো পথে চালিতও করতে পারে।
বিভিন্ন জনমত জরিপের তথ্য বলছে, ডেমোক্র্যাটরা এবার প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৩টি আসনে জয়ের সম্ভাবনা অনেক। এমনকি তারা বাড়তি ১০-১৫টি আসনও পেয়ে যেতে পারে। তবে সিনেটে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে তহবিল সংগ্রহের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোট ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে। বিপরীতে রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের সংগৃহীত তহবিলের পরিমাণ ৩১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই সবকিছু মিলিয়ে ডেমোক্র্যাটরা এবারের নির্বাচনে বড় ধরনের বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে।

তবে সার্বিক ভোটের ফলাফল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পাঁচটি অঞ্চলের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, কেনটাকির সিক্সথ ডিস্ট্রিক্টে জয়-পরাজয় পুরো নির্বাচনের ফলাফলের একটি ইঙ্গিত বহন করবে। এবারের নির্বাচনে এই আসনে লড়ছেন রিপাবলিকান দলের অ্যান্ডি বার ও ডেমোক্রেটিক দলের অ্যামি ম্যাকগ্রাথ। দুই বছর আগে এই অঞ্চল থেকে ট্রাম্প বেশ সহজ জয় পেয়েছিলেন। এই আসনে ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলে, তা রিপাবলিকানদের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। একইভাবে ফ্লোরিডার গভর্নর পদের দিকেও নজর থাকবে সবার। কারণ এই পদের জন্য একজন কট্টর রিপাবলিকানের বিরুদ্ধে লড়ছেন একজন বামমনস্ক ডেমোক্র্যাট। নজর থাকবে জর্জিয়ার গভর্নর পদের দিকেও। এতে জয়ী হলে স্ট্যাসি আব্রামস হবেন প্রথম নারী আফ্রিকান-আমেরিকান গভর্নর। টেক্সাস ও আরিজোনার সিনেটের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। টেক্সাসে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজের বিরুদ্ধে লড়ছেন ডেমোক্র্যাট বেটো ও’রোরকে, যাকে ডেমোক্রেটিক দলের নতুন তারকা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। আর অ্যারিজোনায় লড়ছেন দুজন নারী, যে-ই জিতুন, তা হবে ইতিহাস।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে নির্ধারক হয়ে উঠছে অভিবাসন ও অর্থনীতির বিষয়টি। ট্রাম্প বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর সীমান্তে নিরাপত্তা বলে কিছু থাকবে না। আর ডেমোক্র্যাটরা এই বক্তব্যকে বিভাজনের রাজনীতি আখ্যা দিয়ে ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন। তাঁরা বৈচিত্র্য ও বহুত্ববাদী আমেরিকার কথা বলছেন। ট্রাম্প এরই মধ্যে নিজের কট্টরপন্থা দিয়ে তাঁর সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে সমর্থ হয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা তার বিপরীতে কতটা সফল হয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।