৮০ বছরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শায়খ হাসিনা আহমেদ মোহাম্মাদিন আব্দুল ফাত্তাহ আল-রাবিয়ি। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ঐশীগ্রন্থ কুরআনুল কারিমের খেদমতে নিয়োজিত। শিশুকালেই দৃষ্টি হারান। ১০ বছর বয়সে কুরআন শেখা শুরু করেন এবং কুরআন মুখস্ত করেন।
মিসরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দিকিরনিসের কাফর আব্দুল মুমিন অঞ্চলে বসবাসকারী এ প্রবীণ নারী বাল্যকালেই তার দৃষ্টিশক্তি হারান। চোখে দেখার ক্ষমতা হারালেও মনোবল হারাননি তিনি।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাসিনা স্থানীয় ৫০টি গ্রামে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে স্থানীয় শিশুদের পবিত্র কুরআনুল কারিম শেখানো ও মুখস্ত করানোর খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ভাইয়ের সঙ্গে পবিত্র হজব্রত পালন করাই শায়খ হাসিনা আহমদের শেষ ইচ্ছা।
শিশু বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর তিনি হৃদয়ে কুরআনুল কারিম শেখার প্রবল আগ্রহ লাভ করেন। প্রবল আগ্রহের কারণেই তিনি কুরআনুল কারিম মুখস্ত করতে সক্ষম হন।
কুরআন শেখার স্মৃতিচারণ করে হাসিনা বলেন-
’১০ বছর বয়সে আমি প্রথম কুরআন পড়তে শুরু করি। আহমেদ আল-দামহুজি তখন আমার ওস্তাদ ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে আমাকে একটি মক্তব (কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র) চালু করার আর্জি পেশ করেছিলেন।’
তারপর থেকে কুরআনের পাখি বনে যান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী হাসিনা আহমেদ। ৮০ বছরের এ প্রবীণ নারী তার কুরআনের প্রথম শিক্ষকের পরামর্শেই ২০ বছর বয়সে মক্তব খুলে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এ খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
এ নারীর শিক্ষা পদ্ধতি হলো
তিনি প্রথমে কুরআনের আয়াত পড়েন। শিক্ষার্থীরা তার তেলাওয়াত শোনেন। অতঃপর তিনি ছাত্রদের তা পড়তে বলেন। তারপর তারা কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করেন এবং তিনি শুনেন এবং ছাত্রদের তেলাওয়াত হয়েছে কিনা তা খেয়াল করেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এ নারী ৫০-এর অধিক গ্রামের শিশুদের কুরআন মুখস্ত করার কাজে সহায়তা করেছেন।
তিনি প্রতিদিন কুরআনুল কারিমের ছয় পারা তেলাওয়াত করেন। কারণ যাতে তিনি পবিত্র কুরআন ভুলে না যান। সে জন্যই তিনি নিয়মিত ছয় পারা কুরআন তেলাওয়াত করেন। ফলে প্রতি পাঁচদিনেই তার কুরআন খতম সম্পন্ন হয়।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এ নারীর প্রত্যাশা তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে পবিত্র হজব্রত পালন করবেন।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এ নারী কুরআনের এক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ওমরার পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সে পুরস্কার গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে পবিত্র নগরী মক্কায় যেতে চান।
আল্লাহ তাআলা কুরআনের প্রেমিক শায়খ হাসিনা আহমেদ মোহাম্মাদিন আব্দুল ফাত্তাহ আল-রাবিয়িকে কবুল করুন। তার কাঙিক্ষত হজের মনোবাসনা কবুল করুন। আমিন।