করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন করায় ইমাম চাকরিচ্যুত

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে অংশগ্রহণ করার কারণে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বক্সআলী ভূঁইয়া বাড়ী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুল্লাহকে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ কমিটির এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন অনেকে।

জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলার ৪নং ইউনিয়নের সুলাখালী গ্রামের বাসিন্দা ফেনী-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর চাচা সোনাপুর ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা জিয়াউল হক গত ১৭ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। যার কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন সোনাগাজীর কাফন-দাফন টিম। সে টিমের একজন সদস্য হিসেবে মাওলানা নুরুল্লাহও দাফন কাজে উপস্থিত ছিলেন। যার কারণে মসজিদ কমিটি তাকে ১৯ জুন ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহিত দেয়। তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়।

মাওলানা নুরুল্লাহ ২০১৪ সাল থেকে ওই মসজিদে সুনামের সঙ্গে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মসজিদটি ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কমিটি ও মুতাওয়াল্লিদের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলাউল বলেন, মাওলানা নুরুল্লাহর বিষয়ে কমিটির অভিযোগ তিনি কমিটির অনুমতি না নিয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত দুইজন ব্যক্তির দাফন-কাফনে (গোসল ও আনুষঙ্গিক কাজ) অংশগ্রহণ করেন। তাই ইমামের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে ছুটি দেয়া হয়েছে।

মসজিদের মুতাওয়াল্লি আলমগীর বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় মসজিদে উপস্থিত ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে সব কিছু আমার জানা নেই।

সাধারণ মুসল্লিদের জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে অংশ নেয়ার কারণে ইমাম সাহেবকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া নির্দয় আচরণ। মুসল্লিদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুল্লাহ বলেন, মানবিক দিক বিবেচনায় করোনাকালে সারাদেশে ওলামায়ে কেরাম সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে এগিয়ে এসেছে। যার ধারাবাহিকতায় সোনাগাজী উপজেলাতেও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ সোনাগাজী উপজেলা কাফন- দাফন টিমের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনও কাফন-দাফন টিম নিয়ে কাজ করছে। যার একজন সদস্য হিসেবে আমিও সে কাজে অংশগ্রহণ করি। সোনাগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অজিদ দেব স্যারের নির্দেশে আমরা সর্বোচ্চ সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করেছি। যদি এ কারণে আমার চাকরি চলে যায় তবে তাতে আমার দুঃখ নেই। মানবতার কল্যাণে আমি নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখবো।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সোনাগাজীর ফিল্ড সুপারভাইজার আলমগীর বলেন, মাওলানা নুরুল্লাহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন সোনাগাজী উপজেলা করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীদের দাফন কমিটির একজন সদস্য। উনাকে মসজিদে প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব স্যার ও সোনাগাজী পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন সাহেবকে অবগত করেছি। উনারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

তবে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব বলেন, বিষয়টি আমি শুনিনি। মসজিদ কমিটি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সোনাগাজীর ফিল্ড সুপারভাইজার ও মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।