চর অঞ্চল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার একজন তরুন আশাদুল ইসলাম। পেশায় একজন স্প্রিটবোর্র্ড ড্রাইভার। বর্তমান করোনা সংক্রমণের প্রভাবে যখন দিশেহারা মানুষ ঠিক সেই মূহুর্তে অসুস্থ রোগী পরিবহন সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ উপজেলায় করোন রোগী সনাক্ত হবার পর থেকেই নিরলসভাবে দিন-রাত কে উপেক্ষা করে রোগী পরিবহন কাজে এগিয়ে এসেছে নৈতিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে। পৃথিবী আজ করোনা নামক ভাইরাস আক্রমণের শিকার।
কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়াই অচল করে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। ইউরোপ থেকে আমেরিকার কেউ রেহাই পায়নি মহামারী এ ব্যাধী থেকে। ইতালি, স্পেন, আমেরিকা, কানাডাসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়ে গেছে। চীনের উহান শহর থেকে বিস্তার লাভ করে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি। বাংলাদেশও এই অদৃশ্য করোনার প্রাদুর্ভাবে রোগী সনাক্ত লাখো ঘর ছুঁই ছুঁই অবস্থা। দেশকে করোনা থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য নীতিমালা ঘোষণা করেছেন।
পাশাপাশি সংক্রামন হার বিশ্লেষণ করে এলাকা চিহ্নিত করার মাধ্যমে লকডাউন করে সবাইকে নিরাপদে নিজ গৃহে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছেন। জরুরি অবস্থায় দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা-উপজেলা শহরে প্রশাসন কাজ করছে বিরামহীনভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগের সময় মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়। তার কথাকে বাস্তবে রুপ দিচ্ছে স্প্রিটবোর্ড ড্রাইভার আশাদুল ইসলাম।
মিডিয়াকর্মীরা এমন মানুষকেই খোঁজ করেন যারা নিরবে নিভৃতে কোন লাভ ক্ষতির হিসেব না কষে অসহায় দুঃস্থ মানুষের জন্য কাজ করে থাকেন। কোন প্রকার বাহবা কুড়তে নয় বরং মানবিক প্রশান্তিতে কাজ করে আসছেন। দেশ যখন করোনা আক্রান্ত আতংকে স্থবির। আক্রান্ত রোগীর পাশে যখন অনীহা প্রকাশ করছে স্বজনরা। তখন করোনা রোগীদের পাশে দাড়িয়েছে মানবতার এ সারথী।
মেহেন্দিগঞ্জের চুনারচর ৯ নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর আলম সিকদারের ছেলে আশাদুল ইসলাম আসাদ। তিনি সরকারি পাতারহাট আর.সি কলেজ বি.বি.এ (অনার্স) ১ম বর্ষের ছাত্র । স্প্রিটবোর্ড চালিয়ে নিজের পড়াশুনা ও সংসারে খরচ যোগাচ্ছে আসাদ। দারিদ্র্যের কাছে হার না মানা এই তরুনের বাবা জেলে হলেও বার্ধক্যজনিত কারনে দীর্ঘদিন কাজ করতে পারছেনা। যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম হিসেবে বরিশাল-মেহেন্দিগঞ্জ রুটে প্রতিনিয়ত স্পিটবোটে পারাপার হয় ঐ এলাকার মানুষ।
শতাধিক স্প্রিটবোর্ড রয়েছে এই ঘাটে। সম্প্রতি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হবার পর থেকে নিজ সুরক্ষায় চলে যায় স্থানীয় ড্রাইভাররা। যার পরিপেক্ষিতে করোনা উপসর্গ সহ যে কোন উন্নত চিকিৎসা নিতে বরিশালে আসতে সময় নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন ঐ এলাকার জনগন।
এমন অবস্থা চলতে থাকলে কেউ যখন রাজি হচ্ছিল না রোগী পরিবহনে, তখন নিজের কথা না ভেবে এ পর্যন্ত প্রায় অধিকাংশ রোগী কে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে আশাদুল ইসলাম। নিজের স্বাস্থ্য ঝুঁকির হচ্ছে জেনেও কেন সে রোগী সেবা দিচ্ছেন এ বিষয়ে আলাপকালে তিনি দৈনিক আজকের তালাশ কে জানান, আমাদের এলাকাটি চর অঞ্চল। বর্তমানে করোনা যেভাবে মানুষের জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে, সেই যুদ্ধে আমরা যদি পিছিয়ে যাই তাহলে এই মহামারী আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
রোগীদের শারীরিক অবস্থা দেখে নিজের কথা ভাবার সময় পাই না। উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে মানুষ যেভাবে পারছে ছুটছে। সেই জায়গা থেকে আমি রোগীদের জন্য কাজ করছি।