কমিউনিটি পুলিশিং দিবস

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago
বাংলাদেশ পুলিশ

কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ধারণা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এটা কোনো নতুন উদ্ভাবন নয়। শতাব্দীকাল আগে প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নাগরিক শরিকানা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ১৮৯৮ সালের সিআরপিসির ২২ ধারায় বলা আছে, সরকার সময়ে সময়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা নাগরিকদের (কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া) জাস্টিস অব পিস নিয়োগ দিতে পারবে। যদিও এর অনুশীলন নেই, কিন্তু ১৯৭৩ সালেই আমরা এই বিধান ধারণ করেছি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরাও পদাধিকার বলে জাস্টিস অব পিস হিসেবে গণ্য হন। তাহলে আমরা দেখতে পাই, প্রচলিত আইন নাগরিকদের জন্য কী বিরাট মর্যাদা নিশ্চিত করে রেখেছে। সুতরাং, যে নাগরিকেরা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তাদের সামাজিক মর্যাদা উচ্চতর হবে, দলমত-নির্বিশেষে সমাজে তাদের প্রতি একটি সমীহ মনোভাব ও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা।

আইনের শাসনের কার্যকারিতা মানুষের আস্থায় টিকে থাকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে পুলিশে নিয়োগ, পদোন্নতি ও কর্মস্থল নির্ধারণে দলীয় বিবেচনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। পুলিশ বাহিনীকে যা দ্রুত বিবেচনায় নিতে হবে, তা হলো শুধু লোকবল বা সাজসরঞ্জাম বাড়ালেই চলবে না; বিদ্যমান বাহিনী ও তার ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট বলে বিবেচিত না হওয়ার বোধ থেকেই কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব পেয়েছে। সুতরাং, পুলিশ বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে, কার্যকর সুফল পেতে চাইলে কমিউনিটি পুলিশিংকে অধিকতর কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে আমরা কমি‌উনিটি পুলিশিং ডের সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আলোচনার দাবি রাখে। বিলম্বে হলেও তিনি প্রকাশ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বজায় না রাখার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সব দলের লোক এই কমিটির সদস্য হতে পারবেন, তবে তাঁরা কেউ রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন না।’

কিন্তু যখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দেখি িকংবা কারও কারও আচরণে দলীয় আনুগত্যের প্রকাশ ঘটে, তখন আইজিপির বক্তব্য অসার হয়ে পড়ে। কমিউনিটি পুলিশকে রাজনীতিমুক্ত করার আগে নিজেদের রাজনীতিমুক্ত হতে হবে, বাড়াতে হবে পেশাদারত্ব। আইজিপি কমিউনিটি পুলিশিং দিবসে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি যদি কথার কথা না হয়, তাহলে পুলিশ বিভাগের আচরণে পরিবর্তন আশা করা অযৌক্তিক হবে না। আপনি আচরি ধর্ম বলে একটি কথা আছে। আইজিপি মহোদয় ও তাঁর সহযোগীরা সেটি মনে রাখলে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার যে িবরাট ঘাটতি আছে, তা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।