৪৯তম ওভারের চতুর্থ বল। ডিপ মিডউইকেটে দীপক চাহারকে উড়িয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে। হাতে আছে ২ বল। ভারতীয় ফিল্ডাররা জড়ো হয়ে আলোচনা করছিলেন, বিষয়বস্তু-তো একটাই। মিরাজকে আটকানো।
না, মিরাজকে আটকানো যায়নি। ইনিংসের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে দেখা পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের। তাও মাত্র ৮৩ বলে! ওয়ানডে ইতিহাসে মিরাজ দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি ৮ কিংবা তার নিচে নেমে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন।
ম্যাচ শেষে তৃপ্ত মিরাজের সাবলীল ভাষ্য, ‘না, এটা কখনোই ভাবিনি যে সেঞ্চুরি হবে। তবে দলের জন্য খেলেছি, ফ্লো ছিল, আল্লাহর অনুগ্রহ ছিল অশেষ, হয়ে গেছে।’
মিরাজ যখন ব্যাটিংয়ে আসেন ভাবার কথাই না। ১৯তম ওভার শেষ না হতেই বাংলাদেশের ৬ উইকেট পড়ে গেছে। স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ৬৯। মিরাজ যখন শেষ করলেন তখন প্রতিপক্ষ শিবিরের জন্য স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে গেছে বিশাল রানের পাহাড়। আগের ম্যাচে যেখানে ১৮৬ রান নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে সেখানে ২৭১ রানতো বিশালই।
অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মিরাজ প্রথমে জুটি গড়েন। ভারতের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটের জুটিতে গড়েন রেকর্ড ১৪৮ রান। দুজনের পথচলা খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু কঠিনকে ভালোবাসা মিরাজ যেন হেসে হেসে পুলসিরাত পার হয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকেও।
মিরাজ বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে একটা কথাই হয়েছিল। আমাদের ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, আমরা ঠিক করিনি যে এত রান করতে হবে। আমরা শুধু বল টু বল খেলার চেষ্টা করেছি এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি। মাঝেমধ্যে রিয়াদ ভাই আমাকে বোঝাচ্ছিলেন, মাঝেমধ্যে আমি তাকে বোঝাচ্ছিলাম যে ‘ভাই, এই পরিস্থিতিতে এভাবে খেলি, এভাবে খেলতে ভালো হবে।’
‘একটা ব্যাপার ভালো লেগেছে যে রিয়াদ ভাই সিনিয়র হয়ে আমাকে শ্রদ্ধা করেছেন এবং আমার কথাগুলি শুনেছেন। এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে এবং রিয়াদ ভাই মাঝেমধ্যে যখন একটু প্যানিকড হয়ে যাচ্ছিলেন, যে আক্রমণ করি, তখন আমি তাকে বোঝাচ্ছিলাম যে, ‘এই পরিস্থিতিতে আক্রমণ না করে আমরা যদি আরেকটু দেখে খেলে এগিয়ে নিতে পারি, তাহলে ভালো হবে।” এই আলোচনাগুলি কাজে লেগেছে।’-আরও যোগ করেন মিরাজ।
মাহমুদউল্লাহ থেমে গেলেও মিরাজ থামেননি। ৬৬তম ওয়ানডেতে এসে পেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা। তার সেঞ্চুরিটি সাজানো ছিল ৮টি চার ও ৪টি ছয়ের মারে। এভাবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের দর্পচূর্ণ করে দেওয়া ইনিংস খেলার পেছনে কি পরিকল্পনা ছিল মিরাজের?
‘আমার একটাই পরিকল্পনা ছিল, ৫০ ওভার ব্যাট করব। মাহমুদউল্লাহ ভাই যখন আউট হয়ে গেলেন, তখন ভেবেছি, রানটা যদি ২৪০-২৫০ পর্যন্ত নিতে পারি, তাহলে ভালো হবে। ২৩০ রানের খেলা একরকম, ২৫০ আরেকরকম। তবে একটা ব্যাপার, ওখানে অসাধারণ ব্যাট করেছে নাসুম। সে যে ২৫-৩০ রান করেছে, দলের জন্য তা অনেক সহায়তা করেছে। বিশেষ করে, রান যেখানে হতো ২৫০, সেখানে হয়েছে ২৭০।এই কৃতিত্ব অবশ্যই নাসুম ভাইয়ের। সে ওখানে দ্রুত রান করেছে এবং তার যে ছোট অবদান রেখেছে, দলের জন্য তা জরুরি ছিল।’
মিরাজের অনবদ্য অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ পকেটে পুরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এবার ভারতকে প্রথমবারের ধবলধোলাইয়ের পালা। সিরিজ জয়ের হাওয়ায় ঘুরে না বেড়িয়ে দুই ম্যাচেরই সেরা খেলোয়াড় মিরাজের এখন চোখ সেকদিকেই!