কক্সবাজারে ৩ বছরে প্রায় ৭৬ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম : সেভ দ্য চিলড্রেন

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago
A Rohingya refugee looks at the full moon with a child in tow at Balukhali refugee camp near Cox's Bazar, Bangladesh, December 3, 2017. REUTERS/Susana Vera TPX IMAGES OF THE DAY

আন্তর্জাতিক শিশুবিষয়ক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, গত তিন বছরে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে ৭৫ হাজার ৯৭১ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। যা মোট রোহিঙ্গা জনসংখ্যার প্রায় নয় শতাংশ।

সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, গত ৩১ মে পর্যন্ত কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে তিন বছরের কম বয়সী এ শিশুরা মূলত তাদের মায়েরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পরই জন্মগ্রহণ করেছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের নতুন বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রায় এক লাখ আট হাজার ৩৭ রোহিঙ্গা শিশু কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে বন্দি অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছে।

সংস্থাটি বলছে, শিশুরা তাদের অনুপযুক্ত পরিস্থিতিতে বাস করছে। তারা যথাযথ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চলাফেরার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা প্রায় সম্পূর্ণরূপে সহায়তার ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে।

রাখাইন থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে এ তথ্য প্রকাশ করে সেভ দ্য চিলড্রেন।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে মায়ের দুর্বিষহ যাত্রার সময় তিন বছর বয়সী রুনা এই পৃথিবীতে এসেছে। রুনা দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। রুনার মা হামিদা সেভ দ্য চিলড্রেনকে বলেন, ‘আমি আমার শিশুদের পড়াশোনা, তাদের ভবিষ্যৎ, তাদের চলাফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’

হামিদা আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে অর্থ নেই, তারা যা চায় আমি তা তাদের দিতে পারি না। আমরা তাদের স্বপ্নপূরণ করতে পারি না। আমরা তাদের সঠিকভাবে ভালোবাসতে এবং যত্ন নিতে পারি না। এজন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি তাদের ভালো খাবার সরবরাহ করতে পারি না। তারা যখন কিছু চায়, আমি তাদের তা দিতে পারি না।’

সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশ শাখার পরিচালক অনো ভান মানেন বলেন, গত তিন বছরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে ৭৫ হাজারেরও বেশি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘একটি সন্তানের জন্ম একটি আনন্দদায়ক উপলক্ষ, তবে এই শিশুগুলো দুর্ভাগ্যের শিকার, এমন একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছে যেখানে তাদের পরিবারগুলো কাজ করতে পারে না, যেখানে তাদের পড়াশোনা এবং স্বাস্থ্যসেবা এবং তাদের চলাফেরার কোনো স্বাধীনতা নেই।’

বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার শরণার্থীদের গ্রহণ করে নিয়েছে। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এই শরণার্থী সংকটের টেকসই সমাধানের কাছাকাছিও নেই।

‘রোহিঙ্গা শিশু এবং পরিবারকে মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের ঘরে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিশ্ব নেতারা, বিশেষত যারা মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তাদের এই সংকটের দ্রুত সমাধানের জন্য উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। আমরা বছরের পর বছর শিশুদের বন্দিদশায় কাটাতে দিতে পারি না,’ যোগ করেন অনো ভান মানেন।

বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা শুরু করলে সাত লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রস্তুতি সত্ত্বেও গত কয়েক বছর চেষ্টা করেও এখনো কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি।