সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ এবং পরিদর্শনে গিয়ে গ্রামবাসীর হামলায় আহত হয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি-এসিল্যান্ড) লিয়াকত সালমান। সেই সঙ্গে ভাঙচুর করা হয়েছে ইউএনওর গাড়ি।
গ্রামবাসী জানায়, এসময় প্রশাসনের সদস্যদের লাঠিচার্জে আরও অন্তত নয়জন আহত হয়েছেন।
রোববার (২১ আগস্ট) সকালে উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের হলদিঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত এসিল্যান্ড লিয়াকত সালমানকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া আহতদের মধ্যে কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনকেও (৯) একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আজিজুল পারভেজ মোবাইল ফোনে বলেন, বলদীপাড়া খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প না করতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন।
এর মধ্যে রোববার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান চৌকিদারকে দিয়ে খবর দেন যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও এসিল্যান্ড মাঠ পরিদর্শন করতে আসছেন।
খবরটি শুনে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ান। এছাড়া রাস্তার ওপর একটি কালভার্টে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেন তারা। এ অবস্থায় ইউএনও ও এসিল্যান্ড একটি মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য বালুর ট্রাক নিয়ে এলে গ্রামবাসী বাধা দেন।
তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে প্রশাসনের লোকজনের মাধ্যমে সুমাইয়া নামে নয় বছর বয়সী একটি মেয়ে আঘাত পায়। এতে লোকজন উত্তেজিত হয়ে ইট-পাটকেল ছুড়লে আহত হন এসিল্যান্ড লিয়াকত সালমান।
পরে গ্রামবাসীর ওপর লাঠিচার্জ করা হলে আহত হন বলদীপাড়া গ্রামের শওকতের স্ত্রী মনিজা খাতুন (৪০), আব্দুস সালামের স্ত্রী আলেয়া খাতুন (৪২), কবিরের স্ত্রী ওজুফা খাতুন (৩৫), শাহাদতের স্ত্রী রেহেনা খাতুন (৩৯), আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী কুমকুমি খাতুন (৩৩), আবু সাঈদের স্ত্রী আকলিমা খাতুন (৫০), নুরাল প্রাংয়ের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন (৫২) ও আলীমুদ্দিনের স্ত্রী মাজেদা খাতুন (৩৭)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্যে সকালে আমি ও এসিল্যান্ড পরিদর্শনে গেলে উঠতি বয়সের কিছু উশৃঙ্খল যুবক ও নারী পথরোধ করেন ও অশালীন আচরণ করেন৷ একপর্যায়ে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। এসময় তাদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে এসিল্যান্ডের মাথা ফেটে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) হাসিবুল ইসলাম বলেন, হলদিঘর ও বলদীপাড়ায় দুটি মাঠ আছে। খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প করা নিয়ে এলাকাবাসী আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে স্কুলের পাশের মাঠটি সংস্কার করে খেলাধুলার জন্য দেওয়া হবে।
আর যে মাঠটি নিয়ে তারা আন্দোলন করছেন, সেটা আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্যই নির্ধারণ করা হয়। সমঝোতা বৈঠক অনুযায়ী শনিবার এ মাঠটিতে একটি টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার কথা।
রোববার সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সেই মোতাবেক সকালে ইউএনও ও এসিল্যান্ড মাঠটি পরিদর্শনে গেলে উশৃঙ্খল গ্রামবাসী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে তারা এসিল্যান্ডের মাথায় আঘাত করেন। খবর পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থলে যাই এবং ইউএনওসহ সবাইকে সেখান থেকে নিয়ে আসি।
গ্রামবাসীর ওপর কোনো লাঠিচার্জ করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশ যাওয়ার আগে কি হয়েছে, সেটা বলতে পারব না। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর কোনো সংঘর্ষ বা লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেনি।