খুলনার আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরীন এশার (২২) মৃত্যুর ১১ দিন পরও প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পরিবারের অভিযোগ, গত ৩ মার্চ রাতে প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে ভিডিও কলে রেখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন এশা। ৪ মার্চ ভোর ৬টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক এশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওইদিনই এশার মা এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার শোভা গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলায় এশার প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকেই প্লাবন পলাতক বলে দাবি করছে গুলশান থানা পুলিশ।
আসামি প্লাবনকে না ধরায় এশার মা সানজিদা আক্তার শোভা জাগো নিউজকে বলেন, ‘১১ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ আসামিকে ধরতে পারেনি। মেয়ের শোকে আমি নিজে অসুস্থ থাকার কারণে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছি না। মামলার খোঁজও নিতে পারিনি। একটু সুস্থ হলে আসামি গ্রেফতারে পুলিশের কাছে খোঁজ নেবো।’
জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার পর থেকেই আসামি প্লাবন ঘোষকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’
মামলার এজাহারে এশার মা সানজিদা নাহার বলেন, প্লাবন ঘোষের সঙ্গে এশার দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্লাবন সনাতন ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হয়ে এশাকে বিয়ে করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। এশা মাঝে-মধ্যে প্লাবনের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে এজাহারে এশার মা উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় প্লাবন এশা ও তার এক বান্ধবীকে আমাদের বাসার নিচ থেকে ঘুরতে নিয়ে যায়। এশার বান্ধবী আমাকে জানায়, ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে এশা ও প্লাবনের মধ্যে মোবাইলে অন্য একটি কল আসাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এশার বান্ধবী তাদের দুজনকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেন। সেখানে সমাধান না হওয়ায় এশা বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে এশা তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম। পরে জানতে পারি, শুক্রবার ভোর ৫টা ২৪ মিনিটে প্লাবনের কাকা আমার মেয়ের বান্ধবীকে ফোন করে জানায়, এশার বাসায় যাও, সে পাগলামি করছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।
এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে প্লাবন আমাকে ফোন করে জানায়, আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে। আমি তার ফোন পেয়ে দ্রুত এশার রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করি। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাই। পরে বাসার সিকিউরিটি গার্ড মেজবাহ, আলামিন ও এশার বান্ধবীর সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করি। আমরা দেখতে পাই, এশা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এরপর সিকিউরিটি গার্ডদের সহায়তায় আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এশা মারা যায়।
এজাহারে এশার মা আরও অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, তারা ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল প্লাবন ঘোষ। এজন্য সে কৌশলে এশার সঙ্গে ঝগড়া বাধায় এবং ইচ্ছে করেই এশাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। প্লাবন এশাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।
খুলনার কুখ্যাত খুনি ছিলেন এরশাদ শিকদার। ১৯৯৯ সালে তিনি গ্রেফতার হন। তার নামে ৪৩টি মামলা ছিল। এর অধিকাংশই হত্যামামলা। নিম্ন আদালতের বিচারে সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয় ও চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়।
২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার শোভা। শোভা খুলনারই মেয়ে। তিনি ছিলেন একজন আইনজীবীর স্ত্রী।