সুনামগঞ্জের ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিনকে হত্যার দায় তার বাবা স্বীকার করার পর এবার নারায়ণগঞ্জে দেড় বছরের শিশু জাহিনকে হত্যার কথা স্বীকার করলেন তার মা।
দেড় বছর শিশুপুত্রকে চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নিহত শিশুর চাচা জাহিদুজ্জামান খান বাদী হয়ে শিশুটির মানসিক ভারসাম্যহীন মা রোকসানাকে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় এ মামলা করেন।
এদিকে নিজের আড়াই বছরের শিশুকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে শিশুটির মা রোকসানা নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুরুন নাহারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান আদালতে রোকসানার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলা পশ্চিম নন্দলালপুর এলাকার আমানউল্লাহ প্রধানের বাড়ির চারতলার ছাদ থেকে নিজের আড়াই বছরের শিশুপুত্র আশফাক জামান জাহিনকে ফেলে দেন। শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিনকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রথমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে পরিবার। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন রোকসানা আক্তারকে গ্রেফতার করেছে।
শিশুটির বাবা নুরুজ্জামান মারুফ জানান, গত পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে একই এলাকার রোকসানা আক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার স্ত্রী রোকসানা মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন। বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এভাবেই চলছিল তাদের অস্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন।
তিনি আরও জানান, সোমবার বিকেলে তার বড় মেয়ে অর্পার ফোন পেয়ে শহরের চাষাঢ়ায় পপুলার হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার স্ত্রী রোকসানা তাদের দেড় বছরের শিশুপুত্র জাহিনকে বাড়ির ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়েছেন। প্রথমে তাকে স্থানীয় পপুলার হাসপাতালে নেয়ার পর সেখান থেকে জাহিনকে নিথর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ওসি আসলাম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় শিশুর চাচা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। শিশুর মা মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওসি আসলাম হোসেন জানান, যদিও নিহত শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন অসুস্থ রোগী। নিজের অজান্তেই হয়তো তিনি এ কাজটি করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও সেটা দাবি করা হচ্ছে। স্বজ্ঞানে কখনও একজন মা এ কাজ করতে পারেন না। তবে আইনের কাছে সব অপরাধীই সমান। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।