ডানহাত কাটা। বামহাতে ধরতে হয় ভ্যানের বডি। ভ্যানভর্তি ডিমের বাক্স। এক হাত ব্যবহার করে সারা দিন বরগুনার আমতলী উপজেলা চষে বেড়ান ডিমবিক্রেতা আবদুর রহিম। পাইকারি এবং খুচরা মিলিয়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি ডিম বিক্রি করেন। এতে তার মাসিক আয় লাখ টাকার কাছাকাছি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আবদুর রহমান সালেহ-
জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে চাচাতো ভাইয়ের রামদার আঘাতে ডানহাত কাটা পড়ে আবদুর রহিমের। আঠারো বছর বয়সে ডানহাত হারিয়ে হতাশাগ্রস্ত আবদুর রহিম একসময়ে সিদ্ধান্ত নেন কিছু একটা করার। কাজের মধ্যে ব্যস্ত সময় কাটানোই ছিল তার মূল ভাবনা।
অনেক চিন্তা-ভাবনার পরে স্থানীয় এক ডিমবিক্রেতার পরামর্শে ডিম বিক্রির উদ্যোগ নেয় আবদুর রহিম। শুরুতে পাঁচ শতাধিক ডিম দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে ডিম সরবরাহ করেন। একসময়ে সরবরাহের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
২০০৫ সালের মাঝামাঝি ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে তার ডিমের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি। উপজেলার অন্য ডিম ব্যবসায়ীর পাশাপাশি স্বরূপকাঠী থেকে পাইকারি মূল্যে ডিম কিনে স্থানীয় দোকানগুলোতে সরবরাহ করাই প্রতিদিনের কাজ।
সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে ডিম বিক্রির কাজ। নিজস্ব ভ্যানে ডিম সরবরাহের কাজ একসময়ে একা করলেও গ্রাহক চাহিদা বাড়ার কারণে দশ হাজার টাকা বেতনের একজন ম্যানেজার এবং ছয় হাজার টাকা বেতনের ড্রাইভারও রাখতে হয়েছে। ডিম বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
শুধু তা-ই নয়, ডিম বিক্রির টাকায় কয়েক লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন বসতঘর। কিনেছেন বেশকিছু ধানি জমিও। এক হাত না থাকায় সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেলেও আক্ষেপ নেই আবদুর রহিমের।
আমতলী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রহিমের জন্ম বরগুনার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের লেমুয়া গ্রামে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মো. শাহ আলম মিয়ার বড় ছেলে আবদুর রহিম। দুই ছেলে এক মেয়ের বাবা আবদুর রহিমের ইচ্ছা- তার সন্তান উচ্চশিক্ষিত হবে।
এ ব্যাপারে আবদুর রহিম বলেন, ‘ব্যবসা ছোট হইলেও ভালো আছি। এক হাত দিয়া কামাই করি, তাই বইলা পোলাপানরে ঘাটতি দেই না কোনোসময়েই।’