উজিরপুরে যে নারীকে নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড়। পুলিশ বাহিনী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের মধ্যে আতংক। গত দুইদিন ব্যাপী উজিরপুরের সকল সংবাদকর্মিদের সমন্বয় ব্যাপক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দীর্ঘ অজানা লোমহর্ষক কাহিনী। জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পুলিশসহ সাধারন মানুষকে জিম্মি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে। এ থেকে রেহায় পায়নি তার বড় ছেলে মৃত রাসেল। রাশিদা বেগম ৫ মাস আগে উজিরপর পৌরসভার ইচলাদী বাসস্টান্ড সংলগ্ন কালাম হাওলাদার (৫৫) এর বাড়িতে বাসা ভাড়া নেয়, এরপর থেকে স্থানীয় বিভিন্ন দোকানে বাকিতে পন্য ক্রয় করে, এমনকি বাড়ির মালিককে ভাড়া না দিয়ে তালবাহানা করে গত ৪ সেপ্টেম্বর পাওনাদারদের টাকা না দিয়ে বাসা বাড়ির মালামাল নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কালে পাওনাদারেরা তাকে বাধা দেয়।
এ ঘটনা শুনে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পালের নির্দেশে এস আই রুহুল আমিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করে। পরে ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশের সহযোগীতায় পাওনাদারদের টাকা আংশিক পরিশোধ করে বাড়ির ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করে উল্টো বাড়ির মালিক কালাম সহ স্থানীয় বোরহান, শুক্কুর ,আনিচের নাম উল্লেখ করে তার মেয়ে সোনামনি (১৩) কে দিয়ে একটি মিথ্যা অপহরনের নাটক সাজিয়ে অপপ্রচার চালায় এবং বাড়ির মালিকের কাছে অগ্রিম বাবদ ৮ হাজার টাকা দিয়েছে বলে দাবী করে। এদিকে বাড়ির মালিক স্থায়ী ভাবে ঢাকায় বসবাস করে। এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক কালাম হাওলাদার জানান রাশিদা বেগম আমাকে কোন অগ্রিম কোন টাকা দেয়নি বরং আমি তার কাছে বাড়ি ভাড়া বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা পাবো। উল্টো সে আমার সম্মান হানি করেছে। অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে রাশিদা বেগম উজিরপুর মডেল থানার সামনে বাচ্চুর চায়ের দোকানে বসে ওসি ও পুলিশকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কনষ্টেবল জাহিদ। গালাগালির কারণ জানতে চাইলে রাশিদা বেগম জানান, পুলিশের কারণে বাকী টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।
এ সময় তিনি গালিগালাজ করতে মানা করতে মানা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের হাতে পরা চুড়ি ভেঙ্গে গাল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে জখম করে। পরে সে সিগারেটের স্যাকা দিয়েছে বলে ওসির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে। অপরদিকে ঘটনার পরের দিন রাশিদা মালামাল নিয়ে বরিশাল এয়ারর্পোট থানার রহমতপুর আলী মিঞার মার্কেটে রফিকের ঘরে বাসা ভাড়া নেয়। বাসায় উঠার পরের দিন ওই মালিকের সাথে ঝামেলা সৃষ্টি করে সেখান থেকে চলে যায়। বাড়ির মালামাল নিয়ে যাওয়ার ট্রাকের ভাড়া না দিয়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করলে এয়ারর্পোট থানায় এস আই মনোজ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়োন্ত্রনে আনে। এ ব্যাপারে রাশিদার ছেলে আলামিন বাবু জানান, তার মা বিভিন্ন জায়গায় ইচ্ছাকৃত ভাবে ঝামেলা সৃষ্টি করে এবং আমাকেও মামলা দেয়ার ভয় দেখায়। এদিকে উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শিশির কুমার পাল জানান, এই মহিলার সাথে আমার কোন ঝামেলা হয়নি। তার মালামাল উদ্ধার করে দেয়া হয়েছে। রাশিদার অনিচ্ছা স্ব^ত্তেও পুলিশ দোকানদারদের পাওনা টাকা আংশিক পরিশোধ করার কথা বলায় ওসি এবং পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করে। কতিপয় প্রতারককে নারী সংঘটিত ঘটনা ও মাদক ব্যবসায়ীকে ওয়ারেন্ট মূলে গ্রেফতার করায় ওই নারীকে ফিটিং দিয়ে ফেইসবুক, অনলাইনে ও কিছু জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করে ওসি ও পুলিশের মানহানি করে। প্রতারক রাশিদা বেগম বিভিন্ন জায়গার মাদারীপুর জেলার ঝাঠুদি ও হরিয়ানা গ্রামের হেলাল মাতুব্বর আবার কোথাও মাঈনুদ্দিন মাতুব্বরকে স্বামী পরিচয় দিচ্ছে তিনি।
তার বড় ছেলে রাসেল মায়ের অমতে ভোলা জেলার চরফ্যাসন পৌরসভার আয়শাবাগ ০৯ নং ওয়ার্ডের বারেক হাওলাদারের মেয়ে মরিয়ম বেগমকে বিয়ে করার কারনে মায়ের দায়ের করা মুলাদি থানার ৭(১১)/১৭, হিজলা থানার মামলা নং ৬(৭)১৭ সহ একের পর এক বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলায় দিয়ে হয়রানী করায় বড় ছেলে রাসেল(২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর) শশুরবাড়ীতে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় চরফ্যাসন থানায় ১৭ ডিসেম্বর একটি অপমৃত্য মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তৎকালিন ওই থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আমিনুল ইসলাম অপমৃত্যু মামলার চূড়ান্ত রির্পোট দেন। এই রির্পোটে ক্ষিপ্ত হয়ে নিহতের মা রাশিদা বেগম ওই থানার অফিসার ইনচার্জ মো: এনামুল হক ও এস আই আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর এবং ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারী আড়াই লক্ষ টাকা ঘুষ চান, ডান পাজরে ঘুষি, ডান হাত ভেঙ্গে দেয়াসহ এস আই আমিনুল জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে রাশিদার গাঁল পুড়িয়ে দেন এবং তার নাবালিকা মেয়ে সোনামনির শরীরের আঘাত করে তাদেরকে গলা ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন মর্মে ওসি ও এস আই এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরিশাল জোনের পুলিশ পরিদর্শক (ডিএন্ডপিএস-১) মো: হেলাল উদ্দিন, বরিশাল জেলা ও মহানগর পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ১৪ মে আনিত অভিযোগ প্রমানিত হয়নি বলে রির্পোট প্রদান করেন।
এছাড়া মাদারীপুর থানায় ২০১৯ সালে ৩৬৪/৩৪ ধারায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ৮(৭)। এই মামলায় তার ছেলে হাসানকে অপহরন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে হাসান নামে তার কোন সন্তান ভূমিষ্টই হয়নি। মামলায় মাদারীপুর থানার কালকিনী উপজেলার আবু তালেব, সাগর ওরফে ভোদাই ফকিরসহ চরফ্যাসন থানার ৪ জনকে আসামী করা হয়। প্রত্যারক রাশিদা বেগম মাদারিপুর থানায় ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট, নারী শিশু নির্যাতন ও মারামারি ধারায় ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হয়রানী মূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৪২। এ মামলায়ও পুলিশ অভিযুক্তদের নামে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী মামলাটি চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করে রিপোর্ট নং ৩৬ আদালতে দাখিল করেন। কালকিনি আদালতে ১৭৫/১৭ একটি সিআর মামলা দায়ের করেন। এছাড়া মাদারীপুর থানায় কতিপয় ব্যাক্তির নামে ২০১৮সালের ৪ সেপ্টেম্বর একটি সাধারন ডায়রি করেন। এ ব্যাপারে উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ, শিশির কুমার পাল জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো মিথ্যা, বানোয়াট। আমার সম্মান হানিসহ আমাকে ব্লাকমেইল করেছে। সঠিক তদন্ত হলে এর মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।