ঈদের ৩ দিন আগে ঢাকা থেকে বরিশাল নৌ রুটে ‘স্পেশাল ট্রিপ’ দেবে যাত্রীবাহী নৌযানগুলো। পদ্মা সেতু উদ্বোধন পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে অন্যান্য নৌযান। ঈদের পর একইভাবে দুই দিন ফিরতি স্পেশাল ট্রিপ দেবে তারা।
ঈদ উপলক্ষে অন্যান্য বছর সরকারনির্ধারিত ভাড়ার দোহাই দিয়ে যাত্রী ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হলেও এবার তারা ভাড়া নেবেন আগের দরেই। তবে আপাতত কেবিন ও ডেকে নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন তারা।
গত কয়েক দিনে আগের চেয়ে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন নৌযান কর্মকর্তারা। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে নৌপথে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আজহার পক্ষকাল আগে থেকে ঢাকা থেকে বরিশাল এবং ঈদের পর বরিশাল থেকে ফিরতি লঞ্চের কেবিন পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হতো যাত্রীদের। এবারের চিত্র ভিন্ন। ঈদের মাত্র ১ সপ্তাহ বাকি থাকলেও লঞ্চগুলোর কেবিন টিকিট আগাম বুকিংয়ে তেমন চাপ নেই। আগের মতো তদবির করতে হয় না ঈদপূর্ব একটা কেবিন টিকিট পেতে। শরণাপন্ন হতে হয় না দালালের।
বর্তমানেও যাত্রীর খড়া ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলোতে। গত ২৬ জুন পদ্মা সেতু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর থেকে লঞ্চে প্রায় অর্ধেক যাত্রী কমেছে বলে জানিয়েছেন এমভি কীর্তনখোলা নৌ পরিবহনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক বেল্লাল হোসেন। দেশের সবচেয়ে আলোচিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর অনেকেই সেতু দেখতে নৌপথ বাদ দিয়ে সড়ক পথে ঢাকায় যাচ্ছেন। এ কারণে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে সড়ক পথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও ভাড়া বেশি হওয়ায় আগামীতে অনেকেই আবার নৌপথে ফিরে আসবেন। তখন বোঝা যাবে পদ্মা সেতু লঞ্চ ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে কি না।
বরিশাল-ঢাকা রুটের সুন্দরবন নেভিগেশনের স্থানীয় কাউন্টার ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন বলেন, ঈদের আগে বরিশাল থেকে ঢাকামুখি যাত্রী সাধারণত কম থাকে। ঈদের আগমুহূর্তে ঢাকা থেকে অনেক যাত্রী আসবে। সে লক্ষ্যে লঞ্চ মালিকদের প্রস্তুতিও রয়েছে। বর্তমানে কেবিন ও ডেক যাত্রী আগের মতোই আছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে অন্য বছরের মতো চাপ না থাকলেও এবারের ঈদযাত্রায় যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন লঞ্চ মালিকরা। শনিবার ঢাকায় লঞ্চ মালিক সমিতির এক সভায় আগামী ৭, ৮ ও ৯ জুলাই ঢাকা প্রান্ত থেকে স্পেশাল সার্ভিস এবং ঈদের পর ১৫ ও ১৬ জুলাই বরিশাল থেকে ঢাকায় স্পেশাল সার্ভিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। বৈঠকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন পরবর্তী নৌপথের চিত্র নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়। তবে আপাতত লঞ্চের কেবিন কিংবা ডেক ভাড়া বাড়ানো কিংবা কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় লঞ্চে সাড়ে ৩শ’ টাকার ডেক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২শ’ টাকা। এদিকে ২ হাজার ৪শ’ থেকে ২ হাজার ৬শ’ টাকার ডাবল কেবিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার এবং দেড় হাজার টাকার সিঙ্গেল কেবিন বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে হাজার টাকায়। হাক দিয়ে ডেকেও আশানুরূপ যাত্রী পাচ্ছেন না তারা। খালি কেবিন নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ছে লঞ্চগুলো।
লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ঈদের আগে ৭, ৮ ও ৯ জুলাই তিন দিন ঢাকাপ্রান্ত থেকে এবং ঈদের পর ১৫ ও ১৬ জুলাই বরিশাল থেকে স্পেশাল ট্রিপ চলবে। এবার ঈদে কি পরিস্থিতি হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। লঞ্চগুলো স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো রুটে চলবে।
লঞ্চ ভাড়া কমানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মালিক সমিতি ভাড়া কমায়নি। কেউ কম নিলে সেটা ভিন্ন বিষয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে লঞ্চের যাত্রীতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে স্বীকার করে রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু দেখা হয়ে গেলে যাত্রীরা আবারও নিরাপদ যান হিসেবে লঞ্চকেই বেছে নেবেন।