একেবারেই শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হয়ে গেল ভারতের চন্দ্রযান-২ এর অভিযান। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায়ই এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্নভঙ্গ হলো।
প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে প্রথম দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় ছিল ভারত। তবে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৫৫ মিনিটে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মিশন সফল হওয়ার কোনো বার্তা আসেনি।
সে সময় কন্ট্রোল রুমে বসে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাকে পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান ইসরোর বিজ্ঞানীরা। শেষ মুহূর্তে চন্দ্রযান ২ এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন ইসরোর প্রধান কৈলাসাভাদিভো শিবান।
প্রধানমন্ত্রী মোদি সে সময় ইসরো প্রধানকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। বার বার পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। চন্দ্রযান ২ এর চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পুরো ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে শুক্রবার রাতেই ব্যাঙ্গালুরুতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী মোদি।
তবে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করতে না পারলেও হতাশ হননি মোদি। বরং তিনি বলেছেন, আমাদের চাঁদে পা রাখার ইচ্ছা আরও তীব্র হলো এবং ভালো কিছুই হবে। তিনি বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে বলেন, এটা জীবনের উত্থান ও পতন। এটা কম কৃতিত্ব নয়। আমি আপনাদের অভিন্দন জানাই। আপনারা সবাই দেশ, বিজ্ঞান ও মানুষের জন্য দারুণ কাজ করেছেন। সব প্রচেষ্টাতেই আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনারা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলুন।
এর আগে রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যবর্তী সময়ে অবতরণের আগে মূল অরবিট থেকে আলাদা হয়ে যায় ল্যান্ডার বিক্রম। তারপর বেশ কয়েকটি ধাপ পাড়ি দেয় এটি। শেষের কিছুক্ষণ সময়কে ‘আতঙ্কের ১৫ মিনিট’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে ইসরো। কিন্তু চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায়ই এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ইসরোর প্রধান কৈলাসাভাদিভো শিবান বলেন, বিক্রম ল্যান্ডার ছিল পরিকল্পিত এবং ২.১ কিলোমিটার পর্যন্ত স্বাভাবিক লাগছিল। পরবর্তীতে পৃষ্ঠের সঙ্গে ল্যান্ডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ বিষয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। চন্দ্রযান-২ কে ইসরোর করা সব অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে জটিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পরিকল্পনা মাফিক যদি সব কিছু এগিয়ে যেত, তাহলে সকাল সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ত রোভার। ১৪ দিন সময়ের মধ্যে চাঁদের সম্পদের খোঁজ করা, পানির সন্ধান করা এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ছবি সংগ্রহের কাজ করত রোভার।
যে এলাকায় বিক্রমের অবতরণের কথা ছিল, সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনো যান নামেনি। এর আগে যেগুলো চাঁদে গিয়েছে সেগুলো হয় উত্তারাংশে না হয় নিরক্ষীয় অঞ্চলে। চাঁদে ধীরে ধীরে অবতরণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে উঠে আসতে পারত ভারতের নাম।