>> ভিসেরা রিপোর্টে বিষক্রিয়ার অস্তিত্ব নেই
>> ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পানিতে ডুবে মৃত্যু
হ্যাঁ, ঠিক পড়ছেন। আত্মহত্যাই করেছিল চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিন। আত্মহত্যা শব্দটির সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যোগ করারও কারণ আছে। বছরের আলোচিত এই একটি ঘটনা নিয়ে কম পানি ঘোলা হয়নি। আত্মহত্যা না খুন, এ নিয়ে রীতিমতো দু’ভাগ ছিল চট্টগ্রামের সব মহল। যদিও ঘটনার একদিন পরেই ‘আত্মহত্যা করেছে তাসফিয়া?’ শিরোনামে এক অনুসন্ধানী সংবাদে দেশের শীর্ষ নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ জানিয়েছিল তাসফিয়ার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় তাসফিয়া ‘হত্যা’ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন সরকার।
প্রতিবেদনে ৭ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর দেয়া তথ্য, পুলিশের তদন্ত, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আত্মহত্যা হিসেবেই এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় আদালতে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক স্বপন সরকার জানান, ভিসেরা রিপোর্টে তাসফিয়ার শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, ধর্ষণের কোনো প্রমাণও নেই। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এ মামলার সব আসামি গ্রেফতার আছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জানা গেছে এটি আত্মহত্যা।
যদিও ঘটনার পর দিনই (৩ মে, বৃহস্পতিবার) তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জাগো নিউজকে জানিয়েছিল, তাসফিয়ার ‘প্রেমিক’ আদনান মির্জাকে জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিও ফুটেজ, সৈকতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথোপকথন, মরদহের সুরতহাল প্রতিবেদন এবং সর্বোপরি আদনানের কল লোকেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হন আত্মহত্যা করেছে তাসফিয়া আমিন।
সে সময় নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (বন্দর) আরেফিন জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে এটা হত্যা নয়, আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। হয়তো প্রেমের স্বপ্নভঙ্গের হতাশা থেকে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আবেগের বশে পতেঙ্গা সৈকতে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেমিকের সঙ্গে প্রথম ডেটিংয়ে তার স্বপ্ন হয়তো পূরণ হয়নি। এছাড়া পরিবার থেকেও তাদের প্রেম নিয়ে বারণ ছিল। এরপরও প্রথম ডেটিংয়ে তারা বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে সিআরবি যায়। সেখান থেকে স্টেডিয়াম সংলগ্ন গ্রিডিগার্টস রেস্টুরেন্টে বসে সেখানেও কিছু খায়নি তারা। পরে দু’জন সিএনজি অটোরিকশা করে গোলপাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে যায়। সেখান থেকে পরে দু’জন দুটি সিএনজিতে করে চলে যায়।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার দিন (২ মে, মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম নগরের গোলপাহাড়ের মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট চায়না গ্রিলের সিসিটিভির একটি ভিডিও ফুটেজে রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়া ও আদনানকে একসঙ্গে বের হতে দেখা যায়। পরে ৩ মে (বুধবার) সকালে স্থানীয়দের দেয়া খবরের ভিত্তিতে পতেঙ্গার ১৮ নম্বর ঘাটের পাশে কর্ণফুলী নদীর পাড় থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের লোকজন থানায় গিয়ে নিশ্চিত করে মরদেহটি তাদের মেয়ে তাসফিয়া আমিনের (১৬)।
৩ মে দুপুরে আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা মোহাম্মদ আমিন। একই দিন সন্ধ্যায় নগরের মুরাদপুর থেকে তাসফিয়ার বন্ধু ও বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান মির্জাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ মামলায় গত ৩ জুলাই আত্মসমর্পণ করলে অন্যতম আসামি কথিত যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এখনও এ মামলায় তাসফিয়ার কথিক প্রেমিক আদনান মির্জা ও তার বন্ধু আসিফ মিজান জেল হাজতে।
বিভিন্ন কারণে আলোচিত ছিল এ মামলাটি তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে শুরু থেকে খুব চাপে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শুরুতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন। সর্বশেষ মামলাটির তদন্ত ভার আসে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। এছাড়া ছায়া তদন্তকারী হিসেবে কাজ করছে র্যাব, সিআইডি ও পিবিআই।