আইনি কাঠামো চূড়ান্ত হলেই এনআইডি সেবা যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

আইনি কাঠামো চূড়ান্ত হলেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

হস্তান্তরের আগে ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয়পত্র আইন সংশোধন এবং সেবা পরিচালনার জন্য নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়ে মত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’-এ এনআইডি সেবাদানকারী সংস্থা হিসেবে ‘নির্বাচন কমিশন’ এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা এবং সুরক্ষা বিভাগের অধীনে এই সেবা দিতে নতুন আইন করার বিষয়ে মতামত দেয় লেজিসলেটিভ বিভাগ। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’ এর সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (বিধি ও সেবা অধিশাখা) শফিউল আজিম বলেন, এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাছে দিতে দুই তিন দিক থেকে কাজ চলছে। এটা পরিচালনার ক্ষেত্রে সুরক্ষা সেবার নিজস্ব আইন লাগবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইনে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন আছে। রুলস অব বিজনেসেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংও এই প্রক্রিয়ার একটা অংশ। সেখান থেকে যে মতামত এসেছে, সে অনুযায়ী সুরক্ষা বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে আইনের ব্যাপারে আরও কাজ করতে হবে। আইন যেটা আছে সেটা পরিবর্তন করতে হবে, একই সঙ্গে সুরক্ষা সেবা বিভাগেরও নতুন আইন লাগবে। আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে অ্যালোকেশনটা (অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামাং দ্য ডিফারেন্স মিনিস্ট্রিস অ্যান্ড ডিভিশন্স) পরিবর্তন করা হবে। আইনি কাঠামোটা দাঁড় করানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন আইনের কাজ সুরক্ষা বিভাগকে করতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও কাজ করছে। আমরা মাঝখান দিয়ে এটা সমন্বয় করছি। হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান আছে। কাজ কোথাও থেমে নেই।

যুগ্মসচিব বলেন, সুরক্ষা বিভাগের হাতে এনআইডি আসলে এর সঙ্গে আরও অনেক সেবা যুক্ত হবে। এখন ২৭টি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনআইডি, আগামীতে এখানে শতাধিক সেবা ইন্টিগ্রেটেড হবে ক্রমান্বয়ে। এটার উপযোগী করে আইন করতে হবে।

তিনি বলেন, এনআইডি সেবা হস্তান্তরে একটা হলো আইনি কাঠামো, আরেকটি হলো টেকনিক্যাল, আরেকটি হলো জনবল বা লজিস্টিক- তিনটি ক্ষেত্রেই কাজ চলমান রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ) তরুণ কান্তি শিকদার  বলেন, আমরা যে প্রস্তাব (রুলস অব বিজনেস সংশোধন) দিয়েছি, সেটা সচিব কমিটিতে পাস হয়েছে। পাস হওয়ার পর ক্যাবিনেট আমাদের জানিয়েছে, এটাতো মূলত রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারাধীন, তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানোর আগে তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় কী মতামত দিয়েছে সেটা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই বলতে পারবে। তারা (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) এখনও আমাদেরকে কিছু জানায়নি।

গত ১৭ মে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসির পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে ইসি সচিব ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগ দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

ওই চিঠিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’ এর রুল ১০ অনুসরণে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়।

একই সঙ্গে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০’ এ ‘নির্বাচন কমিশন’ এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন হতে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই চিঠিতে।

পরে গত ৮ জুন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের কাছে রাখার বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় ইসি। এনআইডির কাজ অন্য বিভাগে গেলে ভোটার তালিকা করা ও তা হালনাগাদ, নির্বাচনসহ বিভিন্ন সমস্যা হবে। এটি সংবিধানবিরোধী বলেও সেই চিঠিতে দাবি করে ইসি।

সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আরেকটি চিঠি দেয় ইসিকে। ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ’ শিরোনামে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়- ‘১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো পত্রের আলোকে সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন হতে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’