জামালপুরের তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় এক মাস যাবত বিক্রি বন্ধ থাকায় কয়েকগুন দাম বেড়েছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের। এতে অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্ভর শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান অ্যামোনিয়া অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
গ্যাস বিক্রি বন্ধ থাকায় এক মাসে যমুনা সার কারখানার ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় কোটি টাকা। কারখানার অবিক্রিত অ্যামোনিয়া বাতাসে ছেড়ে দেয়ায় ফের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সরিষাবাড়ি উপজেলার তারাকান্দির বেশ কয়েকটি গ্রাম।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। এই সার কারখানার গুটি ইউরিয়া তৈরির অন্যতম উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া গ্যাস। দৈনিক ১৭শ মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন যমুনা সারকারখানায় যে পরিমাণ অ্যামোনিয়া প্রয়োজন হয় কারখানার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি অ্যামোনিয়া উৎপাদন হয়ে আসছে।
ইতোপূর্বে উৎপাদিত অতিরিক্ত অ্যামোনিয়া প্রতিদিন বাতাসে ছেড়ে দেয়া হতো। এই বিষাক্ত অ্যামোনিয়া বাতাসে ছেড়ে দেয়ার কারণে যমুনা সার কারখানার আশে-পাশের গ্রামগুলো মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এলাকার গাছ-পালা, ফসলি জমি পুড়ে নষ্ট হয়। এমনকি পুকুরের মাছ ভেসে উঠে। এ অবস্থায় পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে এলাকায় সামাজিক আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সাল থেকে তরল এই গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি শুরু করে।
বিসিআইসির নীতিমালা অনুযায়ী ডিলার নিয়োগ করে অ্যামোনিয়া বিক্রি করা হচ্ছিল। বরফকল, আইরন ফ্যাক্টরি, রং কারখানা, স্পিনিং মিল, কোল্ড স্টোরেজ, গ্যাস ফ্যাক্টরি, মৎস্য হিমায়িতকরণ, ওষুধ ফ্যাক্টরি, পাওয়ার প্লান্ট, এসি কম্প্রেসারসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে তরল এই অ্যামোনিয়ার বিপুল চাহিদা রয়েছে। অ্যামোনিয়া বিক্রির নীতিমালা অনুযায়ী যমুনা সার কারখানার ১৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে অ্যামোনিয়া বিক্রি করা হয়।
গত ২১ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টাঙ্গাইল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম যমুনা সার কারখানায় অভিযান চালিয়ে ডিলারের জমা দেয়া অ্যামোনিয়া সিলিন্ডারের নাম্বারের সঙ্গে ডেলিভারি দেয়া অ্যামোনিয়া সিলিন্ডারের নাম্বারের মিল না থাকায় ৯৯টি অ্যামোনিয়া সিলিন্ডার জব্দ করে অ্যামোনিয়া বিক্রির অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। দুদকের অভিযানের পর থেকে সার কারখানা কর্তৃপক্ষ অ্যামোনিয়া বিক্রি বন্ধ করে দেয়। অ্যামোনিয়া সরবরাহ বন্ধ থাকায় অ্যামোনিয়া নির্ভর অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই বিপাকে পড়েছে।
ঢাকা সামাহ রেজার ইন্ড্রাস্ট্রিজের সিনিয়র পারচেজ অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, অ্যামোনিয়ার অভাবে তাদের কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। যমুনার প্রতি সিলিন্ডার অ্যামোনিয়া সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫ হাজার টাকা। এখন ১৪ হাজার টাকায়ও অ্যামোনিয়া মিলছে না। শুধু সামাহ রেজার ইন্ড্রাস্টিজ নয় অ্যামোনিয়া অভাবে শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যমুনা সার কারখানা থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৭০টি অ্যামোনিয়া সিলিন্ডার বিক্রি করা হত। গড়ে দৈনিক এই খাত থেকে কারখানার আয় হতো ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অ্যামোনিয়া বিক্রি বন্ধ থাকায় গেলো এক মাসে এই খাতে কারখানা প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা সার কারখানার উপ-ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান জানান, অ্যামোনিয়া বিক্রির নীতিমালা ও ত্রুটি বিচ্যুতি যাচাই-বাছাই করে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুনরায় অ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কবে নাগাদ গ্যাস বিক্রি চালু হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।