 
                                            
                                                                                            
                                        
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদের সাংসদ ও সিনেটরদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় গত বছর জুলাইয়ে। এ সংকট সমাধানে নতুন আইন জারি করা নিয়ে গণভোটের আহ্বান জানায় সংসদীয় কমিটি। গত বছরই সংবিধান পর্যালোচনা করে দ্বৈত নাগরিকত্ব সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে এ কমিটি গঠন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। তবে এই কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেননি তিনি। মন্তব্য করেছেন ‘আগামী নির্বাচনের আগেই দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে গণভোট গ্রহণের মতো সময় আমাদের নেই।’ এ ছাড়া গণভোটের মাধ্যমে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছেন ম্যালকম টার্নবুল। তিনি বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন করে দ্বৈত নাগরিকত্বধারীদের সংসদে বসতে দিতে অস্ট্রেলিয়ানরা রাজি হবে কিনা এ নিয়েও আমার সন্দেহ আছে’। তাই আপাতত গণভোটে না গিয়ে বেশ কিছু আইন প্রণয়নে কথা জানিয়েছেন তিনি।
সমালোচনার মুখে দেশটির সিনেটর স্কট লুডল্যাম ও লারিসা ওয়াটার্স গত বছর পদত্যাগ করেন। দেশটির জাতীয় সংসদে আরও ২৩ জন সাংসদ ও সিনেটর রয়েছেন যাঁরা বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটও রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বা ততোধিক নাগরিকত্ব থাকলে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো পদে নির্বাচন করতে পারেন না। তবে নির্বাচনের আগেই যদি কেউ বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো সমস্যা নেই। সংবিধানের এ ধারাকে অব্যাহত রেখেই নতুন আইন জারি করেছে টার্নবুল সরকার।
নতুন আইন অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সকলকেই নির্বাচনের আগে তাদের পারিবারিক ইতিহাস জনগণের সামনে জানাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক প্রার্থীর আর্থিক তথ্যও আইন অনুযায়ী জানাতে হবে। বিশেষ রাজ্য মন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরম্যান সরকারের এ নতুন আইনের কথা জানান। নির্বাচনের পর ৪০ দিনের মধ্যে যে কেউ কোনো সাংসদের নাগরিকত্বের প্রমাণাদি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন। প্রমাণাদি সঠিক প্রমাণ হলে বা কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালে সংসদের মেয়াদকালে তা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। পরবর্তীতে সাংসদের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো ইস্যু সামনে এলে বা প্রমাণাদি যথাযোগ্য না হলে সংসদের বিশেষ অধিকার কমিটি তা খতিয়ে দেখবে এবং করণীয় কী তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
তবে সংসদের অনেকেই দ্বৈত নাগরিকদের সংসদে আসন দেওয়া-না দেওয়ার বিষয়ে গণভোটকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছেন। সংসদীয় কমিটির প্রধান লিবারেল সিনেটর লিন্ডা রেইনল্ডস বলেন, এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানে গণভোটই সবচেয়ে কার্যকর। গণভোট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘কিছুটা কঠিন হলেও, অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের সামনে এসে দাঁড়াতে আমাদের কখনোই ভয় পাওয়া উচিত নয়।’ সংবিধান নিয়ে লিন্ডা আরও বলেন, ‘সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ ১৯০১ সালে রচনা করা হয়েছিল। তবে সে সময়েই আমাদের আটকে থাকলে চলবে না। এটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক।’
সূত্র-সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।