বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিন আজ (১ নভেম্বর)। তবে, অবরোধ চলাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ। এদিকে, রাস্তাঘাটে গাড়ি সঙ্কট, যেকোনো সময় নাশকতাসহ নানা শঙ্কায় আছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা ও সামষ্টিক মূল্যায়ন। পরীক্ষার কারণে ঝুঁকি নিয়েই সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন অনেক অভিভাবক। তবে, কেউ কেউ নাশকতা-সহিংসতার আশঙ্কায় সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তাই, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল কেকা রায় চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। কিছুদিন পর পরীক্ষা। এ অবস্থায় আমরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে পারি না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী কম থাকলেও স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাবো। কারণ, সরকারিভাবে আমাদের বন্ধ করতে বলা হয়নি। এ মুহূর্তে ভার্চুয়ালি শ্রেণিকার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্তও হয়নি।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল থেকে আমরা চার পিরিয়ডের ক্লাস নিচ্ছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এভাবে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে আমাদের।
ভিকারুননিসা অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সুজন বলেন, আমরা এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে যেতে দিতে চাই না। সব অভিভাবকই শঙ্কায় আছেন। ছেলেমেয়ে যেতে না চাইলে তাদের এ পরিস্থিতিতে পাঠানো যায় না।
জানা গেছে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ইংরেজি মাধ্যমের অনেক প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়ালি ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবির দুলু বলেছেন, শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে স্কুল চালাচ্ছেন। কারণ, সরকার বন্ধ ঘোষণা করেনি। আবার বিরোধী রাজনৈতিক দল, যারা কর্মসূচি দিচ্ছেন, তারাও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করছেন না। এখন এমন একটা সময়, যখন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। এ সময়ে সব পক্ষকে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানাই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সব স্তরে ক্লাস ও পরীক্ষা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে, কোনো অভিভাবক যদি তার সন্তানকে স্কুলে না পাঠান, তবে তাকে অ্যাবসেন্স দেওয়া যাবে না। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা যদি বেশি হয়, তাহলে তাদের জন্য ভার্চুয়ালি ক্লাস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, এখন বছরের শেষ প্রায়। শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের সময়ে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই, অবরোধের মধ্যেও ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো অভিভাবক যদি তার সন্তানকে না পাঠান, তবে তাকে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। এছাড়া, কোনো বেসরকারি স্কুল চাইলে সশরীরে ক্লাস না নিয়ে ভার্চুয়ালি নিতে পারবে।
সার্বিক বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেছেন, সামনে তো নির্বাচন। এ পরিস্থিতিতে মূল্যায়ন ও পরীক্ষাও কিছুটা আগানো হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা প্রয়োজন। অন্যথায়, শিক্ষাজট তৈরি হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাবে।