 
                                            
                                                                                            
                                        
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যত প্রভাবশালী হোক না কেন, কোনো অপরাধীকে ছাড় নয়। অপরাধীর পরিচয় অপরাধীই। তার কী পরিচয় সেটা দেখা যাবে না। অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী শাস্তি পায় সেই ব্যবস্থা পুলিশকে গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে অনেক সময় মামলা হয় না। আবার অনেক মামলার সুষ্ঠু তদন্তও হয় না। আদালতে সাক্ষ্যের সময় সাক্ষিও মেলে না। এভাবে মামলাগুলো আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। যার ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আমি পুলিশের এখানে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলব, যেসব মামলা হচ্ছে সেগুলোর যেন যথাযথ ও কার্যকর তদন্ত হয় এবং চার্জশিট হয়। অপরাধীরা যেন শাস্তি পায়। সেই ব্যবস্থাটা গ্রহণ করতে হবে।’
পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে রোববার (৫ জানুয়ারি) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর তৃণমূলের ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ সভায় মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।
কল্যাণ সভায় উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, মানুষ যদি পাশে না থাকে তাহলে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। এই চিন্তা করে জনগণের আস্থা বিশ্বাস পুলিশকে অর্জন করতে হবে। জনগণ যেন মনে করে, পুলিশের কাছে গেছে আশ্রয় মেলে, ভরসা পাওয়া যায়। সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশকে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এক সময় কথায় ছিল, বাঘে ধরলে এক ঘা পুলিশে ধরলে ২০ ঘা। সেই মানসিকতা যেন না থাকে। ইতোমধ্যে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন পুলিশে ভরসা করে। মানুষের এ ভরসা-আস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশের জনবল বাড়িয়েছি। দেশে আয়তন হিসেবে জনসংখ্যা বেশি। তবে পার মাইলে পুলিশের সংখ্যা কম নয়। এ ক্ষেত্রে আসলে পুলিশের এফিসিয়েন্সি প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। পুলিশের স্টাফ কলেজ আমার করে দেয়া, থাকার জন্য নতুন নতুন ব্যারাক আমি করেছি। পুলিশ হাসপাতাল, প্যারেড গ্রাউন্ডও আমার হাতেই হয়েছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আগে বেতনের মাত্র ২০ ভাগ রেশন পেতো পুলিশ। সেই রেশন আমরা শতভাগ করে দিয়েছি। টিফিন ভাতা, ঝুঁকি ভাতা সবই আমি করেছি। যখন পুলিশকে ঝুঁকি ভাতা দিতে চাইলাম তখন সবাই বলল, সবাইকে ঝুঁকি ভাতা দিতে হবে। টিফিন ভাতা দিতেও শুনতে হয়েছে সবাইকে দিতে হবে। অর্থাৎ পুলিশের জন্য আলাদা করে কিছু করতে চাইলেই সবার জন্য করার দাবি ওঠে। কিন্তু একটা বিষয় দেখেছি যে, সবাই যখন নিজেদের দাবি দাওয়া আদায় করে চলে যায় তখন পুলিশের কথা ভুলে যায়।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এ দেশটাকে উন্নত করতে হবে। আমার বাবা এ দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। আর সেই দায়িত্বটা পুলিশ যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমি আশা করি।’
গত দুই বারের পুলিশ সপ্তাহে উত্থাপিত দাবির প্রায় সম্পূর্ণটাই অপূরণীয় থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে, সেগুলো গত বছরের। আমার অফিস থেকে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি, কেন ঝুলে আছে তা আমি জানি না। এখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিব বসে আছেন আমি তাদের কাছে জানতে চাই। তারাই বলবেন, কেন এগুলো পেন্ডিং রয়ে গেছে। এর জবাব তাদের দিতে হবে।’
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ), পুলিশের আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।