মধ্যপ্রাচ্যের কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রধান কার্যালয়ে বোমা হামলার আহ্বান জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের নিরাপত্তা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ধাহি খালফান।
শুক্রবার মিশরের সিনাই উপত্যকায় একটি মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলে আল জাজিরার কার্যালয়ে হামলার আহ্বান জানান তিনি।
এরপরই তার বিরুদ্ধে খোদ আল জাজিরাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিবৃতি দেয়।
দফায় দফায় টুইট বার্তায় খালফান বলেন, ‘আরব জোটকে অবশ্যই সন্ত্রাসের মেশিন…আইএস, আল কায়েদা ও আল নুসরা ফ্রন্টের চ্যানেল আল জাজিরা সন্ত্রাসীদের ওপর বোমা হামলা করতে হবে। ’
২৪ লাখেরও বেশি ফলোয়ারের অ্যাকাউন্টে আমিরাতের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আর কতোদিন তারা (আল জাজিরা) মিশর ও আরব বিশ্বের নিরাপত্তার সঙ্গে তামাশা করবে?’
পরে তিনি আল জাজিরার লোগো সামনে রেখে আইএসের প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী, নিহত আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নসরুল্লাহ ও মিশরের নিষিদ্ধঘোষিত মুসলিম ব্রাদারহুডের ধর্মগুরু ইউসুফ আল-কারযাবীর ছবি মিলিয়ে একটি পোস্টার পোস্ট করেন। যেখানে এই ব্যক্তিত্বদের প্রচারের জায়গা হিসেবে আল জাজিরাকে অভিযুক্ত করা হয়।
এর কড়া সমালোচনা করে আল জাজিরার আরবি সংস্করণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইয়াসের আবুহিলাহা বলেন, ‘আল জাজিরা ও এর কোনো কর্মীর ওপর যদি কোনো আক্রমণ হয়, তবে তার দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে খালাফানকে। ’
আল জাজিরা আরবির এই এমডি বলেন, ‘খালাফানের মন্তব্যের ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। তিনি কেবল আমিরাতের কোনো নাগরিকই নন, সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও। ’
‘সিনাই ভয়াবহ হামলার এই দুঃখ ও শোকের দুঃসময়ে তিনি আল জাজিরার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছেন। খালাফান যেটা করছেন, সেটা সন্ত্রাসে উস্কানি।
সন্ত্রাস কেবল কোনো অপরাধ ঘটানো নয়, সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ করে বা উস্কানি দেয়, এমন কোনো বিবৃতি বা কার্যক্রমও সন্ত্রাস। ’উল্লেখ করেন আবুহিলাহা।
জুন থেকে কাতারের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশরসহ আরব দেশগুলোর বিরোধ চলে আসছে। আরবরা মনে করে, কাতার তাদের আল জাজিরাকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের ঘরের খবর ফাঁস করে শাসকগোষ্ঠীকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। পাশাপাশি কাতারের সঙ্গে তুরস্ক, ইরানসহ আরববিরোধী গোষ্ঠীগুলোর দহরম-মহরম সম্পর্ক নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে তারা।
এরই অংশ হিসেবে কাতারের ওপর অবরোধ দিয়ে আরব জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, অবরোধ প্রত্যাহার চাইলে দোহাকে আল জাজিরা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে সন্ত্রাসে মদত। কিন্তু
কাতার মনে করে, আল জাজিরা বন্ধ করার দাবি তোলে আরবরা মূলত তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। এই দ্বন্দ্বেরই অংশ হিসেবে আমিরাতের ওই কর্মকর্তা তোপ দাগলেন আল জাজিরাকে।