অনুপ্রবেশ ঠেকাতে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা সীমান্তে দক্ষিণ কোরিয়ার এক নাগরিককে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন দেশটির নেতা কিম জং উন। দক্ষিণ কোরীয় ওই নাগরিককে হত্যার ঘটনায় সিউলের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিরল এই ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তিনি।
চিঠিতে উত্তরের নেতা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের কাছে ক্ষমা চেয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটা উচিত ছিল না বলে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, দেশটির ৪৭ বছর বয়সী এক নাগরিক সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় ভাসছিলেন। তাকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। পরে মরদেহে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
গত প্রায় এক দশকের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে দক্ষিণের প্রথম কোনও নাগরিক সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন; যা দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে।
দুই কোরিয়ার সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা ও সৈন্য সমাবেশ রয়েছে। করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের গুলি করে হত্যার নীতি নিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এই নীতির কারণে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী দক্ষিণের ওই নাগরিককে উত্তরের সেনারা গুলি করে হত্যা করেছেন ধারণা করা হচ্ছে।
কিম যা বলছেন চিঠিতে
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ব্লু হাউস বলছে, প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন উত্তরের প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। চিঠিতে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটা উচিত হয়নি বলে স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি।
ব্লু হাউস বলছে, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কিম জং উন। এ ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি।
চিঠির সঙ্গে মুন জায়ে ইনের কাছে সীমান্তের এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদনও জুড়ে দিয়েছেন কিম। এতে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় ঢুকে পড়া দক্ষিণের ওই নাগরিককে ১০টিরও বেশি গুলি করা হয়। উত্তরের সৈন্যরা জিজ্ঞাসাবাদে পরিচয় জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক সুহ হুন।
উত্তর কোরিয়ার তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দক্ষিণের এই কর্মকর্তা বলেন, উত্তরের সৈন্যরা জলে ভাসমান ওই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ভাসমান একটি বস্তু থেকে তার মরদেহ আলাদা করতে না পারায় সৈন্যরা উত্তর কোরিয়ার জাতীয় জরুরি রোগ প্রতিরোধ নীতি অনুসরণ করে সেটি জ্বালিয়ে দেয়।
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।