২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার ২২ মাস হতে চললো। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ১৬ আসামিকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ‘আশা ছাড়া’ কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের দণ্ডপ্রাপ্তদের ফেরানোর প্রক্রিয়াটা কিছুটা কঠিন হলেও কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। সরকার দণ্ডপ্রাপ্তদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকরের ব্যাপারে আশাবাদী।
২০০৪ সালের ওই হামলার ঘটনার ১৪ বছর এক মাস ২০ দিন পর ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন, কারাদণ্ড দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে। এছাড়া ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
হামলা মামলার আসামি ছিলেন ৫২ জন। এর মধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বিচার হয় ৪৯ আসামির। তাদের সবারই সাজা হয়। মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হাইকোর্টে অপেক্ষমান। পেপারবুক তৈরির কাজ শেষে তা গত ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছায়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দুজন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে তারেক রহমানসহ ১২ জন এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে এখনও দুজন পলাতক।
পলাতক আসামিরা হলেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা তাজউদ্দিন ও মোহাম্মদ হানিফ, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান, কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন, খলিলুর রহমান খলিল, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, দুই বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, এই ধরনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটা কখনোই সহজ নয়। পাশাপাশি সময়সাপেক্ষ বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে পলাতকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অগ্রগতি হচ্ছে বলেও দাবি মন্ত্রণালয়ের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি অনেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করছেন। যেকোনো সময়ে তাদের ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করছে মন্ত্রণালয়।
পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি, যেকোনো সময়ে আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে পারব।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার প্রয়াসেরই অংশ এবং ধারাবাহিকতা। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই ঘটনা ঘটেছে এবং এতে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। পলাতকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এই ধরনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটা কখনোই সহজ নয়, বরং সময়সাপেক্ষ। তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং অগ্রগতিও হচ্ছে।