অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ফোনালাপের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব।
পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার (৮ আগস্ট) বিমানবন্দরে র্যাব সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সিনহা হত্যার মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ মামলার তদন্তে র্যাব সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এর পাশাপাশি যে বিষয়গুলো গণমাধ্যমে এসেছে, সব বিষয় সমন্বিত করে তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করবেন। তদন্ত কর্মকর্তা মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে যদি প্রয়োজন মনে করেন, তবে বাহিনীর যে কারও সহযোগিতা নিতে পারেন। এখানে আইনি কোনো বাধ্যবাধকাতা নেই।
মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার আসামি পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর সঙ্গে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মোবাইলফোনে কথা হয়। এরপর উভয়েই কক্সবাজার জেলা এসপির (পুলিশ সুপার) সঙ্গে মুঠোফোনে হত্যার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্টদের ফোনালাপ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট যে ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা র্যাবের নজরে এসেছে। এ ফোনালাপের বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এছাড়া অন্য বিষয়গুলো বিস্তরভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী ছিল? এবং এ হত্যাকাণ্ডে কোন কোন ব্যক্তি নির্দিষ্টভাবে দায়ী? তাদের চিহ্নিত করাই র্যাব মূল লক্ষ্য।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নিহতের বড় বোন যে মামলাটি করেছেন, ওই মামলায় ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকি দুজনের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, বাহারছড়া কেন্দ্রে এই দুটি নামের কোনো পুলিশ সদস্য নেই। এরপরও এই দুজনের বিষয়ে র্যাবের তদন্ত চলছে।
আশিক বিল্লাহ বলেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথের নামে দুটি মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। এই দুটি মামলার ক্ষেত্রে পৃথকভাবে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিহত মেজর (অব.) সিনহার বড় বোন যে মামলাটি করেছেন, ওই মামলার গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী সিফাত। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ যে মামলাটি দায়ের করেছে, ওই মামলায় সিফাত একজন অপরাধী। বর্তমানে সে পুলিশ হেফাজতে। এ বিষয়টি নিয়ে র্যাব পর্যালোচনা করছে, এ বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য হচ্ছে- যেহেতু পৃথক দুটি মামলা হয়েছে, পুলিশের করা মামলার ক্ষেত্রে যে আইনজীবী আছেন তিনি সিফাত ও শিপ্রাকে মুক্ত বা জামিনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। এর বাইরে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা সিফাত ও শিপ্রার খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স, ঘড়ি উদ্ধারের বিষয়ে প্রয়াজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট আসামিকে এখনও র্যাব হেফাজতে নেয়া হয়নি উল্লেখ করে আশিক বিল্লাহ বলেন, আগামীকাল (রোববার) তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে নেয়া হবে। তাদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এরপর ৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে।
৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ বিচারিক হাকিমের আদালতে পুলিশের বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওইদিন রাতেই টেকনাফ থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়।
৬ আগস্ট বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ মামলার সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এতে র্যাব আদালতে প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক লিয়াকত, প্রদীপ ও দুলালকে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর এবং চারজন আসামিকে দুদিন করে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এছাড়া অনুপস্থিত থাকা মামলার অপর দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে জেলা পুলিশের ভাষ্য, পলাতক এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা নামের কোনো পুলিশ সদস্য বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্র ও টেকনাফ থানায় কর্মরত ছিল না।