জীবিত অবস্থায় নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় যার ছিলো অবাধ বিচরণ। নিজ পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে ছিলো কতইনা সখ্যতা। নিজের পরিশ্রমের দ্বারা অর্জিত অর্থে বানিয়েছিলেন এপারের জন্য একটি স্বপ্নের ঠিকানা। যে ঠিকানায় পিতা-মাতা,স্ত্রী ও সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ছিলো তার বসবাস।
তবে মৃত্যুর পরে সেই চিরচেনা ঠিকানার আঙ্গিনায়ও জায়গা হয়নি এমন একজন হতভাগ্য ব্যক্তির। এমন হৃদয় বিদারক ও অমানবিক ঘটনার অবতারণা হয়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মুন্সিরতাল্লুক গ্রামে। প্রাণঘাতী করোনা মানুষের ভেতরের মনোভাবটা অনেক অনেক উন্মোচন করে দিয়েছে। ইস্পাত কঠিন এক সত্যের সঙ্গে করে দিয়েছে পরিচয়। স্নেহ, শ্রদ্ধা, প্রেম ভালবাসা এ সবই কোভিড-১৯ স্বার্থান্বেষণে বেধে দিয়েছে।
মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক সত্ত্বায় বেড়ে ওঠে, অন্যথায় অন্যসবই অভিনয়। এই অভিনয়ের সত্য প্রকাশ হয়েছে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী নূরে আলম সিদ্দিকের কোভিড-১৯’র ছোবলে গত ২২ জুলাই বুধবার মৃত্যু হবার পরে। পরে তার লাশ নিয়ে নিজ এলাকা উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের মুন্সিরতাল্লুক গ্রামে গেলে স্বজনরা বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে লাশ বহনকারী দল নূরে আলমের মরদেহ নিয়ে বাড়ির অদূরে রাস্তায় অবস্থান করতে থাকেন। পিতার লাশ নিয়ে আসার খবর শোনার পরে নূরে আলমের একমাত্র ছেলেকে ধরে রাখতে পারেনি তার পরিবার।
এযেন রক্তের সাথে রক্তের টান,স্বার্থের অনেক উর্ধ্বে। ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে নূরে আলমকে নিজ বাড়ির অদূরে রাস্তার পাশে উজিরপুর স্বেচ্ছাসেবী টিমের সদস্যরা দাফন করেন । তবে একমাত্র ছেলে ছাড়া পরিবারের অন্যকোন সদস্য,এলাকাবাসী এবং প্রতিবেশিরা তার দাফনে অংশ গ্রহন করেননি।
দাফন টিমের সদস্য ও উজিরপুর পৌর কাউন্সিলর মো. বাবুল সিকদার জানান, করোনায় মৃত ওই স্বাস্থ্যকর্মীর লাশ তার পরিবারের লোকজন ও স্বজনেরা বাড়িতেই ঢুকাতে দেয়নি। এক পর্যায়ে বাড়ির রাস্তাই বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি ওই স্বাস্থ্যকর্মীর ছেলে ছাড়া আর কোনো মানুষ লাশের কাছেও আসেনি।
তিনি আরও জানান, লাশ মাটি দেওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এলেও একটি কোদালের প্রয়োজন হলে তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা তা দিতে অপরগতা প্রকাশ করে। শেষে তিনিসহ টিমের অন্যান্য সদস্যরা হাত দিয়ে মাটি এনে এনে কবর দেওয়া সম্পন্ন করেন। এর আগে ২২ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বারিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল
কলেজে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী নূরে আলম। বিষয়টি নিশ্চিত করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্য সহকারী নূরে আলমকে দাফন করা হয়েছে।